সবচেয়ে বড় হীরার খনি!

দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বার্লি শহরটি নর্দান ক্যাপ রাজ্যের রাজধানী। এই শহরের সব কিছুতেই যেন ডায়মন্ড বা হীরা মিশে আছে। ডায়মন্ড ট্যাক্সি, ডায়মন্ড লজ, ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন মল, এমনকি এখানকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামও ডায়মন্ড ওভাল। যে শহরের মাটির নিচে হীরার ছড়াছড়ি, সে শহরের সবকিছুর সঙ্গে ডায়মন্ড থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে হীরা কেনার শখ হয় অনেকেরই। ‘হীরার শহর’ কিম্বার্লিতে গিয়ে শখ পূরণের পাশাপাশি হীরার খনি ঘুরে দেখারও সুযোগ আছে।

মানুষের কাছে পৃথিবীর তাবৎ সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও চাহিদার শীর্ষে রয়েছে হীরা। পৃথিবী নামক ভূখণ্ডে সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বার্লি হীরার খনি আবিষ্কৃত হয়। তাছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার খনি দক্ষিণ আফ্রিকার এই ‘দ্য কিম্বার্লি মাইন’। যেখানে রেকর্ড পরিমাণ হীরা উত্তোলন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় যতো পর্যটকের সমাগম হয় তার একটা বড় অংশ আসে এই বিগ হোল বা দ্য কিম্বার্লি মাইনকে কেন্দ্র করে। প্রায় দশটির মতো হীরার খনি রয়েছে আফ্রিকার এই দেশে, কিন্তু আর সব হীরা খনির চেয়ে কিম্বার্লির কদর যেন একটু বেশি-ই। রূপকথার গল্পের মতোই রহস্যে ঘেরা পৃথিবীর প্রথম এবং সবচেয়ে বড় এই হীরার খনি।

1.সবচেয়ে বড় হীরার খনি!

হীরা ব্যবসার পুরোধা প্রতিষ্ঠান ডি বিয়ারস এই কিম্বার্লি খনির মালিক ছিল। ১৮৬৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ডি বিয়ারসের মালিকানাধীন একটি ফার্মেই ইরেসমাস জ্যাকব নামের এক ছেলে দক্ষিণ আফ্রিকার হোপ টাউনের অরেঞ্জ নদীর পাশে প্রথম হীরা খুঁজে পায়। পরবর্তীতে এই হীরার টুকরাকে ‘ইউরেকা ডায়মন্ড’ নামে অভিহিত করা হয়। তখনকার ক্যাপ কলোনির গভর্নর স্যার ফিলিপ উড হাউসের কাছে তৎকালীন ১ হাজার ৫০০ ডলারে তা বিক্রি হয়। কিম্বার্লিত খনিতে হীরা উত্তোলন শুরু হয় ১৮৭১ সালে, যা পরবর্তীতে ১৯১৪ সালর আগস্ট পর্যন্ত চলমান থাকে। ১৮৭০ থেকে ৮০ দশকের সময় পৃথিবীতে মোট হীরার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হীরা উত্তোলিত হতো এই খনি থেকে।

2.সবচেয়ে বড় হীরার খনি!

হীরা তুলতে গিয়ে এই ৪৩ বছরে ৫০ হাজার খনি শ্রমিক মিলে যে গর্তটা খুঁড়েছেন, সেটি এখন পৃথিবীর বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট গর্তগুলোর অন্যতম। পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে এর নাম হয়ে গেছে ‘দ্য বিগ হোল কিম্বার্লি’। ৪২ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ২১৫ মিটার (৭০৫ ফুট) গভীর এই খনি থেকে কী পরিমাণ হীরা উত্তোলন করা হয়েছে জানলে চোখ কপালে উঠবে-১ কোটি ৪৫ লাখ ৪ হাজার ৫৬৬ ক্যারেট বা ২ হাজার ৭২২ কিলোগ্রাম! তবে এসব হীরার দীপ্তি চোখকে শুধু ধাঁধিয়েই দেয় না, এর পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক বেদনারও গল্প। খনিতে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অগণিত শ্রমিক, স্বজনহারাদের অশ্রুতে ভেসেছে কিম্বার্লি।

3.সবচেয়ে বড় হীরার খনি!

বিগ হোল বলতে যা বোঝায়, পরিত্যক্ত কিম্বার্লি মাইনও ঠিক একইরকম। আক্ষরিক অর্থেই এটি বিরাট এক গর্ত। যার একেবারে নিচে শান্ত নীল পানি। গোলাকার হয়ে চারদিকে পাথুরে মাটি শক্ত হয়ে নিচে নেমে গেছে। পাশেই একটা জাদুঘর। কিম্বার্লি মাইন থেকে হীরা তোলার কাজে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম, হীরা আনা-নেয়ার ছোট ট্রেন, ক্রেন, ওই সময়ের ছবি— এ রকম আরো অনেক কিছুই সাজিয়ে রাখা আছে সেখানে। আর আছে বাহারি নামের হীরা। কোনোটা কোহিনূর, কোনোটা গ্রেট মোগল বা হোপ। বিগ হোল থেকে তুলে আনা জ্বলজ্বলে স্টার অব সাউথ আফ্রিকা, টিফানি, জুবিলি, কালিনান ডায়মন্ডও আছে চোখ ধাঁধিয়ে দিতে।

‘বিগ হোল’খ্যাত এই হীরক খনির গল্প ১০৪ বছরের পুরোনো। কিম্বার্লির এই বিশাল গর্ত আর হীরার কাহিনি আজও মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয় অসাধ্য সাধনের। মাটি থেকে শূন্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছোট ব্রিজের একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিচের বিশাল গর্তের দিকে তাকালে একটা কথাই মনে হবে—মানুষের অসাধ্য আসলে কিছুই নেই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)