কাদাকাটি স্কুলে ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি আইডিয়াল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকালে ঢাকা থেকে একটি টিম তদন্তে আসেন।
প্রায় ২ কোটি ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দে ৩ তলা বিশিষ্ট (নীচতলা উন্মুক্ত) মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টারের নির্মাণ কাজে ৪২টি পাইলিং এর প্রতিটি ডিপ করার কথা ৭২ ফিট। কিন্তু তা করা হয়নি। রডের লেবেল ঠিক না রেখে ঢালাই করা হয়েছে। প্রতিটি পাইলিং-এ ২৯ বস্তা সিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ২৩ বস্তা করে। পিলারে সিডিউল মোতাবেক রড দেওয়া হয়নি। সিমেন্টের ব্যবহারেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। সিম-১ সিমেন্টের ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও তদস্থলে সিম-২ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। রডের ব্যবহারেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। সবশেষে ১৫ সেপ্টেম্বর পাইল ক্যাপ ঢালাই করা হয়। কিন্তু পিআইওকে অবহিত করা হয়নি। স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে পিআইওকে কাজ দেখে নেওয়ার কথা থাকলেও তাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইকরামুল হক জানান, পিআইও কিংবা অন্যদের বলতে চাইলে তিনি (ঠিকাদার) বলেন, কাউকে বলতে হবেনা, যাকে বলার তিনি বলবেন বলে জানিয়েছিলেন বলে জানান। স্কুলের সভাপতি মোসলেম আলি মালী সিমেন্ট সিম-১ ব্যবহার না করে সিম-২ ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বারক নং ৫১.০১.৮৭০১.০০০.১৪.০০৮.১৮.৩৬৬ তাং ১৬/০৯/১৮ পত্রে কাজের ঠিকাদার মিসার্স মিলন ট্রেডার্স, কাটিয়া, সাতক্ষীরাকে কার নির্দেশনায় ও কোন প্রাক্রিয়ায় প্রকল্পের পাইল ড্রাইভের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, কখন কোন অবস্থায় পিআইটি টেষ্ট করা হয়েছে, ফলাফল কি, কার নির্দেশনায় পাইলের ক্যাপের ঢালাই করা হয়েছে, সিডিউল কোথায় তা জানাতে বলা হয়। কাজের অনিয়মের বিষয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়া এবং স্থানীয় লোকজনের মোবাইল ও সিমেন্টের ক্যাটাগরি পরিবর্তন, নিম্নমানের রডের ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে কাজ বন্দের জন্য অবহিত করার পরও কর্ণপাত না করার এবং কার্যাদেশের ১নং শর্তাবলী অনুযায়ী কাজ শুরুর পূর্বে পিআইওকে অবহিত করার কথা থাকলেও না করার কারণে কাজ বন্দ রাখতে পত্র দেওয়া হয়।
এরপর থেকে কাজ বন্দ ছিল। অভিযোগ তদন্তে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহকারী প্রকল্প পরিচালক ইসমাইল হোসেন (এপিডি), উপ প্রকল্প পরিচালক আঃ মতিন সরকার। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহমুদ রঞ্জু, উপ সহকারী প্রকৌশলী মামুন উর রশিদসহ স্কুল সভাপতি, শিক্ষক মন্ডলী, ঠিকাদার ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকালে তেমন কিছু দেখা হয়নি। ঠিকাদারের কাছে প্রকাশ্যে কিছু শোনা হয়নি। পিআইওর কাছে কিছু জানাবোঝা করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে ঢালাইকৃত কাজ দেখতে যাওয়া হয়। তখন চালাকি করে একজন কর্মচারী হাতুড়ি দিয়ে আস্তে ঘা দিয়ে শব্দ শুনাচ্ছিলেন। তখন পাশ থেকে একজন সেখানে গিয়ে নিজে হাতুড়ি নিয়ে ঢালাইয়ের উপর আঘাত করলে বড় একটি অংশ ভেঙ্গে পড়লে চালাকি ধরা পড়ে। তখন ভাঙ্গা অংশটুকু হাতের মধ্যে নিয়ে চাপ দিলে ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যায়। তখন স্থানীয়রা কাজে অনিয়মের কথা বললেও তদন্ত কর্মকর্তারা কর্ণপাত করেননি। কাজের মান ও মালের ব্যবহারে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোন খোজ খবর নেওয়া বা পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়নি। এব্যাপারে সাংবাদিকরা কথা বললে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সবকিছু ঠিক আছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পিআইওর সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহরিয়ার মাহমুদ রঞ্জু জানান, কাজ শুরুর পূর্বে ঠিকাদার আমাদের কাছে আবেদন করার কথা। আবেদন করলে আমরা কি রড, কি সিমেন্ট, কি পাথর ব্যবহার হবে তা টেস্টের জন্য বুয়েটে পাঠাই। কিন্তু এখানে কোন আবেদন না করায় টেস্ট রিপোর্ট ছাড়াই কাজ করা হয়েছে। যা নিয়ম বহির্ভূত। ঠিকাদার মাত্র ২/৩ দিন আগে আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। এখন টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে সঠিক ভাবে কাজ করাতে পারবো। আমাদের অনুপস্থিতিতে কাজ করার কোন সুযোগ না থাকলেও ঠিকাদার কমিটির সদস্য ও প্রধান শিক্ষককে নিয়ে কাজ করিয়েছে। পূর্ববর্তী পিআইও সাহেবও কাজে উপস্থিত ছিলেননা।