শ্যামনগরের নরম কাঁকড়া এখন অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
শ্যামনগরে রপ্তানিযোগ্য চাষে হাতছানি দিচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার। উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ, আটুলিয়া ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ছোট বড় ৪২টি কাঁকড়ার খামারে উৎপাদিত হচ্ছে রপ্তানিযোগ্য কাকড়া। এতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে, তেমনি অনেকেই হচ্ছেন স্বাবলম্বী।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে, শিক্ষিত বেকার যুবকরা কাঁকড়া চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সফলতা লাভ করছে। আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় অল্প সময়েই তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে উৎপাদিত কাঁকড়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কাঁকড়া চাষীদের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়াও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চিংড়ির চেয়ে ভাইরাস বা অন্যান্য সমস্যা কম থাকায় কাঁকড়া চাষকে বেছে নিচ্ছে মৎস্যচাষীরা। অল্প সময়ের ব্যবধানে তাই সাতক্ষীরায় উৎপাদিত কাকড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ফলে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কয়েক বছরেই ‘সফটসেল কাঁকড়া চাষ’ এলাকায় সাড়া ফেলে দেয়। চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ায় লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করে কাঁকড়া চাষ। শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয়, কাঁকড়া চাষে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানও।
কাঁকড়া চাষীরা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিকভাবে বড় হয়। এ অঞ্চলের লবণাক্ত পানি ১২ মাস কাঁকড়া চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হয় কিন্তু কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে।
তারা আরও জানান, বাজার থেকে কাঁকড়া কিনে ছোট ছোট খাঁচায় রেখে বড় করা হয়। ১৫ থেকে ২০ দিনেই একবার খোলস পরিবর্তন করে প্রতিটি কাঁকড়া। এতে প্রতিটি কাঁকড়ার ওজন বেড়ে যায়। পরে এই কাঁকড়া রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তাই সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে খাঁচায় কাঁকড়া চাষ পদ্ধতি।
উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ী, দাতিনাখালীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাঁচা পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি কাঁকড়ার ফার্ম গড়ে উঠেছে। এখানে উৎপাদিত কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের পর চলে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ভাইরাস সংক্রমণের আশংকা না থাকায় চাষীদের জন্য ঝুঁকিও কম।
কলবাড়ীর ফরহাদ সফটসেল ক্র্যাব এগ্রো ফার্মের মালিক কাঁকড়া চাষী বি.এম ফয়সাল ইকবাল জানান, পড়াশুনা শেষ করে দীর্ঘদিন বেকার জীবন কাটিয়ে ২০১৫ সালে সফটসেল কাঁকড়া চাষের কাজ শুরু করি। ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০০০ খাঁচা নিয়ে নরম কাঁকড়ার চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার ঘেরে ১০০০০ খাঁচায় কাঁকড়া চাষ এবং ১০-১২ লাখ টাকা খাটছে। দেড় বিঘা জমিতে বাৎসরিক ৬-৭ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সরকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষীদের কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করলে সাতক্ষীরা থেকে চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়াও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করবে।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারুক হুসাইন সাগর বলেন, উপজেলায় নরম কাঁকড়া উৎপাদনের ৪২টি খামার গড়ে উঠেছে। কাঁকড়া যেমন অল্প সময়ে বেশি উৎপাদন হয় তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা বেশি। প্রতি হেক্টরে নরম কাঁকড়ার বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২০ টন। আর শক্ত কাঁকড়া হেক্টর প্রতি উৎপাদন দুই টন। আমরা আশা করছি আগামীতে এর উৎপাদন বেশি হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।