দানায় ভরা ফলের নাম বেদানা-চাষ হচ্ছে যশোরের শার্শায়
আব্দুর রহিম রানা, যশোর : দানায় ভরপুর অথচ নাম বেদানা। এক সময়ের আমদানি নির্ভর ফলটির চাষ এখন দেশেও হচ্ছে। এমনই এক বেদানা চাষির নাম শামসু শেখ। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোল পৌর এলাকার রাজবাড়ি গ্রামে।
শামসু শেখ মূলত একজন নার্সারি ব্যবসায়ী। শত রকমের গাছের চারা বিকিকিনি তার কাজ। এই পেশার সূত্র ধরে তার মাথায় চাপে বেদানার চাষ করার। যে চিন্তা সেই কাজ। চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে রাজবাড়ির রাজভিটায় শুরু করেন বেদানার চাষ।
বেদানা মূলত ইরান ও ইরাকের ফল। বর্তমানে এটি তুরস্ক, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, লেবানন, মিশর, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশে চায় হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ফলটির চাষ শুরু হয়েছে। অনেকে বেদানার চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। একটি বেদানা গাছ থেকে বছরে তিন থেকে চার হাজার টাকার ফল পাওয়া যায়।
বীজ থেকে বেদানার চারা সহজে উৎপাদন করা যায়। তবে বীজের চারার গাছে ফলের মাতৃত্বগুণ বজায় থাকে না। এজন্য শাখা কলম দিয়ে বেদানার চাষ করা লাভজনক। কলমের গাছে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। ফুল আসার পর পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত সময় লাগে ছয় মাস। লাভজনক মাত্রায় ফল পেতে আট-দশ বছর সময় লাগে।
একাদিক্রমে একটি গাছ ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। সারা বছরই কিছু না কিছু ফল হয়। বসন্তকালে যে ফুল হয় তাতে ফল হয় গ্রীষ্মকালে। আর বর্ষার শুরুতে যে ফুল হয় তাতে ফল হয় হেমন্ত কালে। গ্রীষ্মকালের ফল অপেক্ষা হেমন্ত কালের ফল মানে ভালো হয়। প্রথম ফল ধরার সময় গাছপ্রতি ২০-২৫টির বেশি ফল পাওয়া যায় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলন বাড়তে থাকে। দশ বছর বয়সের একটি গাছে গড়ে ১০০-১৫০ টি ফল ধরে। তবে ভালো পরিচর্যা নিলে গাছপ্রতি ২০০-২৫০টি ফল পাওয়া যেতে পারে।
নার্সারির কেয়ার টেকার রমিজ উদ্দিন জানান, শামসু শেখ ভারত থেকে কলম সংগ্রহ করে বেদানার চাষ শুরু করেন। চার বছর আগে লাগানো গাছে ফুল-ফল আসা শুরু করেছে। কিছু কিছু ফল বিক্রিও করা হচ্ছে। তবে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে লাভজনক হয়নি। এ অবস্থায় পৌছাতে এখনো কিছু দিন সময় লাগবে।
বেদানা গাছে পূর্ণমাত্রায় ফল আসার আগ পর্যন্ত বাগানের ফাঁকা জায়গায় অন্য ফসল যেমন শাক-সবজি ডাল বা বিভিন্ন ফলের চাষ করা যেতে পারে। রমিজ উদ্দিন বলেন, গাছের ফাঁকে ফাঁকে মরিচ রোপণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষেতের চারপাশে আমড়া গাছ লাগানো আছে। এই আমড়ায় বছরে ৬০ হাজার টাকা লিজ খরচ ও বেদানা বাগানের পরিচর্যা খরচ আরো ৪০ হাজার টাকা উঠে আসবে। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে কলম তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি কলম ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ থেকেও খরচের একটা বড় অংশ উঠে আসছে।
যশোর ভেষজ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু হানিফ জানান, বেদানা আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসার পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় বেদানা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে বেদানা হচ্ছে হৃদযন্ত্রের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শেকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়।
এই ফল ত্রিদোষ বিকারের উপকারী, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। বেদানা বিশেষভাবে হৃদপিন্ড ভালো রাখতে, ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে, স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে, হাড় ভালো রাখতে, দাঁতের যত্নে, ডায়রিয়া প্রতিরোধে, সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে, কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সরাসরি ভূমিকা রাখে।