কুল্যার মোড়ে সোনার বাংলা ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু সিভিল সার্জন’র তদন্ত
সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই আশাশুনির কুল্যার মোড়ে সোনার বাংলা সহ কয়েকটি বে-সরকারি ক্লিনিকের চলছে ভুল চিকিৎসা। প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ সব রোগের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চলছে এই সব ক্লিনিকগুলোতে। ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় প্রাণও গেছে কয়েকজন রোগীর। হয়রানী ও ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে একাধিকার জরিমানার টাকাও গুনতে হয়েছে তাদের। আশাশুনি উপজেলার কুল্যার মোড়ে বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে কয়েকটি ভবন ভাড়া করে সরকারি নিয়ম-নীতির কোন কিছু না মেনেই চলছে এই সব ক্লিনিক।দু-একটি ক্লিনিকের সব ঠিকঠাক থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিকের বেহাল দশা।
গত সপ্তাহে কুল্যার মোড়ে সোনার বাংলা ক্লিনিকে ভুল অপারেশনের ফলে এক রোগী ও অপর এক রোগীর সন্তান মারা গেলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে রবিবার (০৭ অক্টোবর) সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার তহিদুর রহমান সরেজমিনে ঘটনা তদন্তে আসেন। একটি সূত্র জানান সিভিল সার্জন সোনার বাংলা ক্লিনিকে আসার খবর আগে থেকে তারা পেয়ে যায়। এসময় সোনার বাংলা ক্লিনিক একজন ডাক্তার ও নার্স উপস্থিত রাখেন। তিনি চলে যাওয়ার পর পর ক্লিনিকে ডাক্তার ও নার্স কাওকে দেখা যায়নি। এর পর সিভিল সার্জন কুল্যার মোড় ও বুধহাটার বিভিন্ন ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্ন জবাবে তিনি জানান, সোনার বাংলা ক্লিনিকের কাগজপত্র নিয়ে নেয়া হয়েছে । তাদের ক্লিনিক বন্ধ রাখার কথা বলেছি এবং মা সার্জিকাল,রয়েল ক্লিনিক,বুধহাটা ফেমাস ক্লিনিক সহ কয়েকটা কিøনিকের কাগজপত্র নিয়ে নেয়া হয়েছে। এবং তাদেরকে ও ক্লিনিক বন্ধ রাখার কথা বলেছি ।
সরেজমিন কুল্যার মোড় ও বুধহাটার অধিকাংশ ক্লিনিকে অনুসন্ধানে যেয়ে জানা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে হাতুড়ে নার্স দিয়ে রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে চলছে এই সব ক্লিনিকগুলা। সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তারের বদলে রয়েছে ক্লিনিক মালিক নিজেরাই। এনেসথেসিয়া ডাক্তার ছাড়াই করা হচ্ছে সিজার সহ বিভিন্ন রোগের অপারেশন। প্যাথলজিক্যাল টেস্ট হচ্ছে বাইরে থেকে অনভিজ্ঞ লোকজন ডেকে এনে। পাশ করা কোন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই অধিকাংশ ক্লিনিকে । এই সব ক্লিনিকের সাইনবোর্ডে কিছু সুনামধন্য ডাক্তারের নাম লেখা থাকলেও তারা কখনো আসে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গ্রাম থেকে রোগী বাগিয়ে আনার জন্য রয়েছে একাধিক নিয়োজিত দালাল চক্র। রোগী আনলেই পায় নির্দিষ্ট হারে কমিশন। ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া কয়েকজন সিজারিয়ান রোগী অভিযোগ করেন হাসপাতালের দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ ও সেবার মান নিয়ে। রোগীরা জানায়, কোন সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষনিক কোন সমাধান মেলে না। কম টাকায় ভাল চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় রোগীরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে। ভর্তি হওয়ার সময় চুক্তি হয় একরকম অথচ রোগীর ছাড়পত্র নেওয়ার সময় বিভিন্ন অজুহাতে নেয়া হয় জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা। প্যাথলজিক্যাল টেস্টে রিপোর্ট পাওয়া যায় ভুলে ভরা। এসব ভুল রিপোর্টে অনেক রোগী সর্বশান্ত ও ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে। ভুল রিপোর্ট ও অপচিকিৎসায় রুগী মৃত্যুবরণ করেছে এমন অভিযোগ রয়েছে একাধিক। সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তার না থাকা, ডিপ্লোমা পাশ নার্স না থাকা, হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সহ বিভিন্ন কারণে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মোটা অংকের টাকা জরিমানা গুনতে বাধ্য হয়েছে এই সব ক্লিনিককে। এরপরেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই আগের মত চালিয়ে যাচ্ছে ক্লিনিকগুলো। ক্লিনিক ব্যবসার অন্তরালে সুন্দরী মেয়েদের নার্স সাজিয়ে ক্লিনিকে রেখে দেহ ব্যবসা চালায় বলে স্থানীয় কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন। রবিবার সরেজমিনে ক্লিনিকে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতেই ক্লিনিক মালিকরা বিভিন্ন কথা বলার ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। কয়েক জন ক্লিনিক মালিক জানান, নিয়ম-নীতি মেনে কেউ ক্লিনিক ব্যবসা চালাতে পারবে না। মফস্বল এলাকায় নিয়ম মেনে ক্লিনিক চালাতে গেলে বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে হবে। অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।