সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে জীবন নিয়ে খেলছে ক্লিনিক মালিকরা
ভুল চিকিৎসায় দেশের ক্লিনিক গুলোতে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ তার একমাত্র কারন এম,বি,বিএস ডাক্তার ও দক্ষ নার্স বিহীন চিকিৎসা দেওয়ার কারনে।
একজন এম,বি,বিএস ডাক্তার পরিচালনা করেন প্রতিদিন বিশ থেকে ত্রিশটি ক্লিনিক। ডাক্তার সাহেবের দায়িক্ত শুধুমাত্র রোগীদের সব ধরনের অপারেশন করা। তারপর বাকি কাজ করবে ক্লিনিকের অদক্ষ নার্স।
এসকল অদক্ষ নার্সদের নিন্মতম প্রশিক্ষণ নেই,শুধুমাত্র ডাক্তারের সাথে এবং ওই ক্লিনিকে থেকে রোগীদের ঔষধ দেয়ার জ্ঞান অর্জন করেছে।
বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে নার্সের কাজ করতে হলে নিন্মতম কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন ক্লিনিক মালিকদের জন্য প্রয়োজন হয়না। ক্লিনিকে এমনও অদক্ষ নার্স আছে যারা মাংস পেশির ইনজেকশন দেন শিরায়, আর শিরারটা দেন মাংস পেশিতে এমনই অভিযোগ সেখানে ভর্তি রোগীদের। ডাক্তার ও অদক্ষ নার্সের ভুল চিকিৎসায় অকালে ঝরে যায় অনেক প্রাণ আসলে এ দায় ভার কার?।
সরকার জনগণকে সঠিক সেবা প্রদান করার জন্য একটি নিতিমালা প্রণয়ন করেছেন। সেটি হল একটি ক্লিনিকে একজন এম,বি,বিএস ডাক্তার ও একজন ডিপ্লোমা নার্স থাকবে সর্বক্ষণ। নবায়ন লাইসেন্স,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র,নারকুটি লাইসেন্স,ইনকামটেক্স ও ফায়ারসার্ভিস লাইসেন্স।
এছাড়া ওটিতে থাকবে এসি, হাউড্রোলিক টেবিল সহ সার্জিকাল সকল যন্ত্রপাতি।
সরকারি নিতিমালা তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় অবৈধ ভাবে চলছে ৮ টি ক্লিনিক। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে ও স্থানীয় প্রভাব খাঁটিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ক্লিনিক ব্যবসা। রোগীদের জীবন নিয়ে খেলা করছে ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকরা এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ৮ টি ক্লিনিকে যেয়ে দেখা যায় এম,বি,বি,এস ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স ছাড়া এবং নবায়ন লাইসেন্স বিহীন চলছে ক্লিনিক গুলি।
কালিগঞ্জ পাউখালি অবস্থিত এ আলী ক্লিনিক ও ফুলতলা মোড়ে অবস্থিত ঝরনা ক্লিনিক যেয়ে দেখা যায় কোন এম,বি,বিএস,ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নেই। তাছাড়া নবায়ন লাইসেন্স,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র,নারকুটি লাইসেন্স,ইনকামটেক্সও ফায়ারসার্ভিস লাইসেন্স কোনটি নেই। একজন গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা প্রদান করছেন ওই দুটি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া নাজিমগঞ্জ বাজারে অবস্থিত যমুনা ক্লিনিকে এম,বি,বিএস ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নেই। নারায়ণ-পুরে অবস্থিত সার্জিকাল ক্লিনিকে কোন ডাক্তারের দেখা মেলেনি।
কালিগঞ্জ বাস টার্মিনালের পাশে অবস্থিত ডাক্তার হযরত আলী ক্লিনিকে ডাক্তার নার্স কোন কিছু নেই ডাক্তার হযরত আলী বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন তারপরও ওই ক্লিনিক তাকে দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার পরিবারের সদস্যরা।
নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নলতা মাছের সেটে অবস্থিত নাহার ক্লিনিকে লাইসেন্স,ডাক্তার,নার্স কোন কিছুই দেখা যায়নি। কালিগঞ্জে ডাক্তার, নার্স, ওটিতে এসি, হাউড্রোলিক টেবিল সহ সকল সার্জিকাল যন্ত্রপাতি বিহীন চলছে সব কয়টি ক্লিনিক।
সরকারি কোন নিয়ম নিতি না মানলেও ক্লিনিক গুলোর প্রতি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ওই সব ক্লিনিকে ভর্তি রোগীদের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা তো আগে জানতামনা ডাক্তার সব সময় এখানে থাকেনা। শুধু মাত্র অপরেশন করার পরে ডাক্তার সাহেবের আর খোঁজ থাকেনা।
তাছাড়া গ্রাম্য ডাক্তার ও অদক্ষ নার্স দিয়ে সেবা প্রদান করা হবে এটাতো আমরা বুঝতে পারিনি বলে জানান রোগীরা।
ওই সকল ক্লিনিকে কর্মরত নার্সদের সাথে কথা বলে জানা যায় কেউ ৫ম শ্রেণি পাশ আবার কেউ কেউ পড়াশুনোর পাশা পাশি নার্স হিসেবে দায়িক্ত পালন করছে। স্বল্প বেতনে নিজেদের সুবিধার জন্য অদক্ষ নার্স দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন ক্লিনিক মালিকরা।
অবৈধ ভাবে ক্লিনিক চালানোর কারণ জানতে চাইলে ক্লিনিক মালিকরা বলেন, সরকারি সব নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হয়না। এজন্য যতটুকু পারছেন কিছুটা নিয়ম নিতির মধ্য থেকে তাদের সেবা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডাক্তার,নার্স ও লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণ জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার তৌহিদুর রহমান বলেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের তার উপজেলার ক্লিনিকের অনিয়ম দেখার দায়িক্ত। তাছাড়া তিনি অডিটে যাওয়ার আগেই ক্লিনিক মালিকরা কোন কোন ভাবে টের পেয়ে যান।
এজন্য অডিটের সময় সব কিছু পরিপূর্ণ রাখেন সকল ক্লিনিক মালিকরা। তবে যেসকল ক্লিনিক মালিক সরকারি নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।
নিজেদের লাভের জন্য জীবন নিয়ে খেলা করছে ক্লিনিক মালিকরা ডাক্তার ও নার্স বিহীন কিভাবে সেবা প্রদান করছে ওই সকল প্রতিষ্ঠান? এমনই প্রশ্ন সচেতন মহলের।
অতিদ্রুত সকল অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন কালিগঞ্জ উপজেলা বাসী।