এন্টিবায়োটিক সেবনে কিছু সাবধানতা!
এন্টিবায়োটিক হলো সেসব ঔষধ যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ধ্বংস করে অথবা তাদের বিষক্রিয়া নষ্ট করে। এন্টিবায়োটিক সেবনে কিছু অজ্ঞতা এবং অসচেতনতা আমাদের দেহে তৈরি করেছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (এন্টিবায়োটিক ঔষধের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়া অথবা পরজীবীর প্রতিরোধ)। এটি হয় যখন কোনো জীবাণু কোন একটি নিদিষ্ট এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে তোলে এবং এর কার্যকরীতা নষ্ট করে। এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করার প্রথম দিকে এটি পুরোপুরি জীবাণু ধ্বংস করে না। কিন্তু দুই-তিনদিন খাওয়ার পর যখন অধিকাংশ জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায় তখন আমরা সুস্থ অনুভব করি। তবে এন্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করলে কিন্তু তখনো কিছু জীবাণু দেহে থেকে যায়, যা এন্টিবায়োটিক এর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে নিজেদের মাঝে পরিবর্তনের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই তৈরী হয় এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জীবাণু।
এ রেজিস্ট্যান্স জীবাণু যার দেহেই ছড়িয়ে পড়বে তার ওপর এন্টিবায়োটিক আর কাজ করবেনা। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৫০ সালের পর এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর কারণে আর কোনো এন্টিবায়োটিকেরই কার্যকারিতা থাকবে না। এর মারাত্মক ভয়াবহতা এড়াতে সুস্থ অনুভব করলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক এর কোর্স অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এ ছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত নিজ থেকে কোনো এন্টিবায়োটিক সেবন করা যাবেনা। নিম্নমানের এন্টিবায়োটিক গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঔষধ সেবনের পাশাপাশি কিছু ফলমূল ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই সাবধানতা:
আপেল: অসুস্থ রোগীর সেবা শুশ্রূষা জন্য তাদের খাদ্য তালিকা আপেল যুক্ত করা হয় কিন্তু উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত ঔষধ ‘এটেনোলোল’, এলার্জি প্রতিরোধের ঔষধ ফেক্সোফেনাডিন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধ ‘গ্লিমপিরাইড, গ্লিবুরাইডপ, গ্লিপিজাইড’ সেবনের ৪ ঘণ্টার মধ্যে আপেল বা আপেলের জুস পান করলে ঐ সকল ওষুধের কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে যায়। তাই এই সময়ের মধ্যে আপেল বা আপেলের জুস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আঙুর: অসুস্থ ব্যক্তির খাদ্য তালিকা আরও একটি বহুল ব্যবহৃত ফল হচ্ছে আঙ্গুর। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধ ‘অ্যামলোডিপাইন’ সেবনের সময় আঙ্গুর অথবা আঙ্গুরের জুস রক্তে ওই ওষুধের মাত্রা অতিরিক্ত বাড়িয়ে টক্সিসিটি তৈরি করে। আবার কোলেস্টরেল কমানোর জন্য ব্যবহৃত ঔষধ ‘রোজুভাস্তাটিন’ এর মাত্রা কমে যায়।
কমলা: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ঔষধ ‘লোসারটান, ওলমেসারটান, ক্যাপটোরিল, এনালপ্রিল’ ইত্যাদি ঔষধ সেবনের পাশাপাশি অতিরিক্ত কমলার জুস পান করলে অনিয়ন্ত্রিত অথবা অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
দুধ: আমাদের একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে অসুস্থ রোগীদের দূর্বলতা কাটানোর জন্য আদর্শ খাবার হচ্ছে দুধ। কিছু নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক যেমন (অ্যাজিথ্রোমাইসিন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন) সেবনের মাঝে দুধ পান করলে এর কার্যকারিতা ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাই এ সময় দুধ পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।