কলকাতায় শুটিং বন্ধ, চলছে বাংলাদেশের নাটক
সময় কাটছে না পশ্চিমবাংলার মা-কাকিমাদের। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা অবধি বিভিন্ন চ্যানেলে নানা টিভি সিরিয়াল দেখে যাদের সময় কাটত, তাঁরা এখন পড়েছেন মহাবিপদে। সারাদিনের কাজ শেষে টিভিটাই ছিল যাদের সঙ্গী, এখন তাঁরা সময় কাটানোর জন্য আর কিছু না পেয়ে রীতিমতো প্রমাদ গুণছেন।
গত শনিবার থেকে টালিগঞ্জে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে প্রযোজকদের কাজিয়ার জেরে বাংলা সিরিয়ালের সাপ্লাই লাইনে ছেদ পড়েছে। ফলে বাঙালি মা-কাকিমাদের নিত্যকার রুটিনও উল্টে গেছে। দুশ্চিন্তার ছায়া নেমেছে পশ্চিমবাংলার প্রায় প্রতিটি বাঙালি ঘরে। কবে টালিগঞ্জের কাজিয়া মিটবে, কবে থেকে বাংলা সিরিয়ালের নতুন এপিসোড দেখা যাবে তার কোনো ঠিক নেই। ফলে বাধ্য হয়ে পশ্চিমবাংলার বহু জায়গাতেই স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের কাছে অনুরোধ আসতে শুরু করেছে, অন্তত এই সময়ে বাংলাদেশের কিছু চ্যানেলের সংযোগ দেওয়া হোক।
কলকাতা সংলগ্ন নিউব্যারাকপুর অঞ্চলের ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী অনুপ নাগ জানালেন, বুধবার সকাল থেকে গ্রাহকদের অনেকেই ফোন করে বাংলাদেশের কিছু টিভি চ্যানেলের সংযোগ দেওয়া যায় কি না সেই বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। এর মধ্যে পশ্চিমবাংলার গৃহস্থ ঘরের বাঙালি মধ্যবিত্তরা অবসরের বিনোদন হিসেবে মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের বেশ কিছু টিভি চ্যানেলের নাটক কিংবা ইউটিউবে বাংলাদেশের আপলোড করা সিরিয়ালে মনোনিবেশ করতে আরম্ভ করেছেন।
দমদমের বাসিন্দা মৈনাক সিনহা জানালেন, বাংলা সিরিয়াল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন দামি মোবাইল ফোনের দখল চলে গেছে গিন্নির হাতে। মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের টিভি নাটক আর বিভিন্ন সিরিয়াল ইউটিউবে দেখেই সময় পার করছেন নারী-পুরুষ সবাই।
পশ্চিমবঙ্গের ফিল্ম পাড়া টালিগঞ্জের জট কবে খুলবে তার উত্তর জানা নেই কারোরই। কলকাতার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ফিকশন ও নন-ফিকশন মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪টির মতো সিরিয়াল হয় বাংলায়। এসব সিরিয়ালে প্রায় দুই হাজারের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেন। সেই সঙ্গে কলাকুশলী কাজ করেন আরও হাজার সাতেক।
আনুমানিক ১০ জন প্রযোজকের ছাতার তলায় ওই কাজগুলি হয়, যার জন্য প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ৬০ লাখ রুপি। সেই কর্মযজ্ঞ গত শনিবার থেকে থমকে যাওয়ায় একদিকে যেমন টালিপাড়ায় দুশ্চিন্তার মেঘ জমেছে, তেমনি দুশ্চিন্তার মেঘ জমেছে পশ্চিমবাংলার বাঙালি ঘরে ঘরেও।