ঈদের ছুটিতে ভারত যেতে উপচেপড়া ভিড়

পাঁচ দিনের ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঈদ প্যাকেজে অসংখ্য বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ফলে ঈদের ছুটির সোম, মঙ্গল ও বুধবার-এই তিন দিনে প্রায় ১২ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছে।

বুধবার সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের নো-ম্যানসল্যান্ড ও যাত্রী টার্মিনালের সামনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে শুল্ক কর্মকর্তা ও ইমিগ্রেশন পুলিশের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাইন ঠিক রাখতে বিজিবি সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, প্রচণ্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার নারী, শিশু ও পুরুষ। ধীর গতির কারণে দুই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।

ঢাকায় চাকরি করেন অমিত কুমার সাহা। বুধবার সকালে বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার সময় বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ভবনে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করি। তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় পাই না। এবার ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। কয়েকজন আত্মীয় আছে। এ সুযোগে তাদের সঙ্গে দেখা হবে, বেড়ানোও হবে। কিন্তু ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি লাইনে। কখন পার হবো জানি না।

যাত্রী টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা জামিল হোসেন বলেন, শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছি। ভারতে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাব। কাজের ব্যস্ততার কারণে এতদিন সময় করে উঠেতে পারেনি। লম্বা ছুটিতে ব্যস্ততা কম থাকার সুযোগে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। চিকিৎসা শেষে ভারতের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরব। ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকায় পাসপোর্টের কার্যাদি সম্পন্ন করতে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।

Benapole-Chackpost1

ময়মনসিংহের প্রদীপ কুমার বলেন, পরিবার নিয়ে ভারত যাচ্ছি। বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও সোনালী ব্যাংক বুথে জনবল কম থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল বাড়ছে না। অথচ ভ্রমণকর বাবদ ৫০০ ও বন্দরের টার্মিনাল চার্জ বাদ ৪৫ টাকা করে আদায় করে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। অল্প সময়ে এবং কম খরচে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে কলকাতা হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যাওয়া যায়।

ফলে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার পাসপোর্ট যাত্রী এই পথে ভারত যান। তবে ঈদের ছুটিতে পাসপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। গত তিনদিনে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১২ হাজার যাত্রী বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেছেন।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ইমিগ্রেশনে কোনো সমস্যা নেই। পাসপোর্ট যাত্রীদের চাপ বাড়লেও দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে ১৬টি ডেস্কে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে অফিসাররা। এবার ঈদে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভারত ভ্রমণের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য ইমিগ্রেশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা বলেন, যাত্রীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন তার জন্য ঈদের ছুটির মধ্যেও জনবল বাড়িয়ে চেকপোস্ট শুল্ক তল্লাশি কেন্দ্রে কাজ চলছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)