সজনে পাতা সমাচার
সজনে পাতাকে মরিঙ্গা ড্রামস্টিক বলা হয়। আমরা সজনে ডাটা খাই। কিন্তু সজনে পাতায় বিস্ময়কর যেসব গুণ রয়েছে তার কথা আপনারা অনেকেই জানেন না। কিন্তু এই সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। এই সজনে পাতাকে বলে নিউট্রিসাস অব ফুড। সজনে গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি।
সজনে পাতায় রয়েছে অনেক পুষ্টি ও ঔষুধিগুণ। সজনে পাতাকে বলা হয় নিউট্রিসাস সুপার ফুড। পৃথিবীর সব থেকে পুষ্টিকর হার্ব এটি। কমলা বা লেবু থেকে ৭ গুণ বেশি পুষ্টি উপাদান আছে সজনে পাতায়। দুধের থেকে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং ডিমের থেকে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে সজনে পাতায়।
সজনে পাতার উপকারিতাঃ
-অন্ধত্ব দূর করতে বেশি কার্যকরি এটি। গাজর থেকে বেশি ভিটামিন এ রয়েছে এ পাতায়।
-সজনে পাতা আ্যনিমিয়া দূর করে। কারণ এতে শাকের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি আয়রন রয়েছে।
-কলা থেকে বেশি পটাশিয়াম আছে সজনে পাতায়। এটি আ্যন্টিএজেন্স হিসেবে কাজ করে।
-সজনে পাতা হার্ট ভালো রাখে।
-উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
-রক্তের সুগার লেভেল কমানোর ফলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
-মাইক্রো নিউট্রিয়েট নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ডেফিসিয়েন্সি কমায়।
-কোলস্টরেল কমায়।
-হজম শক্তি বাড়ায়।
বিশেষ করে অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে সজনে পাতা খুবই উপকারি। এক গবেষণায় দেখা গেছ, ৩ গ্রাম পাতা ২ বেলা করে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। এ পাতা শত বছর ধরে প্রায় ৩০০ রোগের ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে ফলের বিচীতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া প্রপারটিস।
পানি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কিন্তু এই সজনে পাতা খুব কার্যকরি। পানি পরিশুদ্ধ করার জন্য আপনি সজনের ফলের বিচি গুড়া করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। ব্রেস্ট ফিডিং মায়েদের জন্য এ পাতা অত্যন্ত উপকারি। এতে রয়েছে ৯৯ ধরনের পুষ্টি উপাদান, ৪৪ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ১৮ ধরনের আ্যমাইনো এসিড, ৮ ধরনের প্রয়োজনীয় আ্যমাইনো এসিড। যার জন্য একে বলা হয় নিউট্রিসাস সুপার ফুড, নেচারাল মাল্টি ফাইভামিনস ও মিরাক্কেল ভেজিটেবল। জাতিসংঘের যে হাঙ্গার প্রজেক্টগুলো রয়েছে সেখানে সজনে পাতা গুড়ো করে আফ্রিকার পুষ্টিহীন শিশুদেরকে খাওয়ানো হয়।
কিভাবে খাবেন এ পাতা?
সজনে পাতার ভর্তা:
- সজনে পাতা
- পেঁয়াজ
- মরিচ
- রসুন
একটি প্যানে অল্প একটু পানি দিয়ে সজনে পাতা মাখা মাখা করে সিদ্ধ করতে হবে। সাথে পেঁয়াজ মরিচ ও রসুনও সিদ্ধ করে নিতে হবে। সজিনা পাতা শক্ত। তাই এটি সিদ্ধ হতে সময় বেশি লাগবে। এটি আসলে গাছের পাতা শাক নয়। সজিনা পাতা ওজন কমাতে খুব ভালো কাজ করে। এটা যদি কেউ এক সপ্তাহ খায় তবে তার ওজন অনেক কমে যাবে। মিডিয়াম আচেঁ অল্প অল্প পানি দিয়ে ঢেকে সজিনা পাতা সিদ্ধ করবেন। সজিনা পাতা সিদ্ধ হয়ে গেলে এটার পানিটুকু শুকিয়ে ঝরাঝরা করে ফেলবেন। তারপর পাতা পাটায় বেটে নিয়ে সঙ্গে একটু লবন ও সরিষার তেল মিশিয়ে ভর্তা করবেন। এটা খুবই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এই সজনে পাতার ভর্তা যদি কেউ প্রতিদিন খায়, প্রতিদিন না পারলেও যারা সপ্তাহে ৩ দিন খাবে। তাদের ওজন নিশ্চিত কমে যাবে।
সজনে পাতার বড়া:
এখন আপনাদের বলব সজনে পাতার বড়া কিভাবে বানাবেন। এ পাতার বড়া খুবই মজাদার একটি খাবার। এটি খুবই মুচমুচে হয়। বিকালের নাস্তা হিসেবেও আপনি এটি রান্না করে খেতে পারেন। প্রথমে এ পাতাগুলো ছাড়িয়ে নিতে হবে। পাতার সাথে যে ছোটছোট ডালপালা থাকে। ওইগুলো যেন আর না থাকে। তাই একটা একটা করে পাতা ছাড়িয়ে নিবেন। কারণ এগুলো থাকলে খাবার সময় ভালো লাগবেনা। এরপর নিবেন কিছু চিংড়ি মাছ। চালের গুড়া একেবারে মিহি করে গুড়া করে নিবেন। সেইসাথে আরও নিবেন কাচামরিচ কুচি, লবন, পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি,হলুদ গুড়া ও মরিচ গুড়া।
প্রথমে সজনে পাতাগুলো আরও কুচিকুচি করে কেটে নিতে হবে। পাতাগুলো একেবারে কুচিকুচি করে কাটতে হবে। তারপর এর সাথে নিবেন চালের মিহি গুড়া। এরপর দিবেন লবন, কাচামরিচ, রসুন স্বাদ অনুযায়ী। চিংড়ি মাছ এবং পেঁয়াজ কুচিও এর সাথে দিয়ে দিবেন। সঙ্গে মরিচ, হলুদ গুড়ো দিয়ে সুন্দর করে এগুলো মাখিয়ে নিবেন। সাথে আপনি একটু পানি মিলিয়ে মাখাতে পারেন। অল্প অল্প করে পানি দিবেন, বেশি পানি দিবেন না একসাথে। এটি বেশি নরম হয়ে যাবে। ভাজতে কষ্ট হবে। বেশি নরম বা বেশি শক্ত করে এটি মাখাবেন না। মাখানো হলে একটি প্যানে তেল নিবেন। বেশি তেল নিবেননা। অল্প পরিমানে তেল নিয়ে এপাতার বড়া বানিয়ে তেলের মধ্যে দিয়ে দিবেন। ভাল করে ভেজে নিবেন। আপনার ইচ্ছামত যেকোন সাইজের বড়া বানিয়ে ভেজে নিতে পারেন। এভাবেই আপনি পেয়ে যাবেন মজাদার ও মুচমুচে সজিনা পাতার বড়া।