স্বপরিচয়েই ভোটার হতে পারবেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গ বা ‘হিজড়া’ হিসেবে পরিচিত মানুষদের লিঙ্গ পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া সত্ত্বেও এতদিন নারী বা পুরুষ পরিচয় বহন করেই নথিভুক্ত হতে হয়েছে তাঁদের৷ সম্প্রতি এ নিয়ে অগ্রগতির কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷

২০১৩ সালে হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত নীতিমালা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পায়৷ ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার৷ তবে এতদিন আইনি জটিলতায় আটকে ছিল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পরিচয়৷ সম্প্রতি ভোটার তালিকায় নারী ও পুরুষের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে আরেকটি পরিচয় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আব্দুল বাতেন জানান, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবেন৷ নারী ও পুরুষের পাশাপাশি নিবন্ধন ফরমে তৃতীয় লিঙ্গদের জন্যও আলাদা আরেকটি পরিচয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ একই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডটি তাদের নিজস্ব পরিচয় বহন করবে৷ এ বিষয়ে কমিশনের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে বলেও জানান তিনি৷

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তাঁরা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ভোট দিতে পারবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বাতেন জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর যেহেতু খুব বেশি দেরি নেই, এর মধ্যে কেবল যারা নির্বাচন অফিসে এসে নতুন করে নিজেদের তালিকাভুক্ত করতে চাইবেন তাঁদের নামই সংযোজন বা সংশোধন করা হবে৷ পরবর্তীতে এ চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা নিজেদের পরিচয়েই দেশের নাগরিক হিসেবে নথিভুক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের নাদিরা খানম রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হন৷ তবে পরিচয় হিসেবে তাঁকে বেছে নিতে হয়েছিল ‘নারী’ পরিচয়৷ তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ভোটার হতে পারার এ সংবাদকে স্বাগত জানিয়ে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি জানিয়েছে৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ৷ তবে এখনো সে আইন বাস্তবায়ন হয়নি৷ পরিচয় নিশ্চিত করা গেলে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে৷” আইন না থাকায় ‘নারী’ হিসেবে ভোটার হতে বাধ্য হন নাদিরা এবং এই পরিচয়েই প্রার্থী হন তিনি৷ পরিচয়পত্রে নিজস্ব পরিচয় দেবার সুযোগ থাকলে আরো অনেক দেশের মতোই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা নিজস্বতা নিয়ে ভোটের মাঠে আসতে পারবে, যা সার্বিকভাবে এ জনগোষ্ঠীর মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)