একজন দলনেতা থেকে জাতীর নেতা
বলা হয় পাকিস্তানের রাজনীতি আর ক্রিকেট একাকার। আর এজন্য পাকিস্তানে সবচেয়ে কঠিন কাজ নাকি ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেয়া এরপরই দেশ চালানো।
সেই কঠিন কাজটি ১৯৯২ সালে করে সফল হয়েছিলেন ইমরান খান। দেশকে স্বপ্নের বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। তখন হয়তো ইমরান খান স্বপ্নেও ভাবেননি রাজনীতি করবেন! কিন্তু, পরে ঠিকই রাজনীতিতে এসেছেন।
গতকাল বুধবার দেশটির সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ইমরান খান বলতে গেলে আরেকটি ইতিহাস গড়েছেন। পা রাখতে যাচ্ছেন আরেকটি কঠিন কাজে। সব ঠিক থাকলে তিনিই এখন পাকিস্তানের নব্য প্রধানমন্ত্রী।
দেশটির একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, আর ইমরান হচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯২ সালে পাকিস্তানের একমাত্র ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের পর ইমরান ১৯৯৬ সালে পিটিআই গঠন করেন। এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ইমরানের দল জয়ী হবে। কিন্তু, এর আগে ২২ বছর তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গণে। দল গঠনের পর প্রথম তিন নির্বাচনে একটি মাত্র আসনে জয় লাভ করে ইমরানের দল।
তবে গত নির্বাচনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে পিটিআই। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দেশব্যাপী জয় লাভ না করলেও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সরকার গঠন করে ইমরানের দল।
গত ১৫ বছর ইমরান খেলাধুলা থেকে দূরে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞ হিসেবে টিভিতে উপস্থিত হয়েছেন কালেভদ্রে। এখন ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা শুধু খেলার ভাষা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণায় সীমাবদ্ধ।
১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেতে অভিষিক্ত হওয়ার পর ইমরান খান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে খ্যাতি পান। খেলোয়াড়ি জীবনে নিজেকে বেশ কয়েকবার বদলে ফেলেন তিনি। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে অর্থাৎ ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২-৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম একজন ফাস্ট বোলার। ব্যাটসম্যান হিসেবে যে কোনো পজিশনে ছিলেন অবিসংবাদিত।
তবে, বোলার বা ব্যাটসম্যান ইমরান খান নয়, পাকিস্তানকে বদলে দিয়েছিল অধিনায়ক ইমরান। ১৯৮২ সালে তিনি ক্যাপ্টেন হওয়ার পর পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সেরা ক্রিকেট দলে। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া তাদের সমকক্ষ আর কেউ ছিল না। ইমরানের নেতৃত্বে পাকিস্তান তিনবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল, তিনবারই ১-১ এ সিরিজ ড্র হয়।
এছাড়া ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসসহ কয়েকজন অসাধারণ উঠতি খেলোয়াড়ের পথনির্দেশক হিসেবে স্বীকৃত তিনি।
খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা সময়ে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত পাকিস্তানিদের একজন ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণির অংশ হয়ে যাওয়া ইমরানকে নিয়মিত দেখা যেত অন্যান্য অঙ্গনের তারকাদের সঙ্গে।
খেলা ছাড়ার পর ইমরান প্রথমে একটি সর্বাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলায় মনযোগ দেন (সেখানে সামর্থ্যহীন বিনামুল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়)। এরপর রাজনীতিতে যোগ দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন রক্ষণশীল, ডান ঘেঁষা গোষ্ঠীর মতাদর্শ তুলে ধরার জন্য।
চূড়ান্ত ফলেও পিটিআই জয়ী হলে প্রথমাবারের মতো কোনো ক্রিকেটার একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না ঘটনা চক্রে পাকিস্তানে সদ্য শেষ হওয়া ইমরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের কিন্ত একটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক এই নেতা সে দেশের সর্ব সাধারণের নেতা হয়ে উঠতে পারেন কি না।