গাজীপুরে ভোট-যুদ্ধ: ফুরফুরে আ.লীগ, শঙ্কায় বিএনপি
রাত পোহালেই ভোট। অপেক্ষায় গাজীপুরের ভোটাররা। বিশ্বকাপের ডামাডোলের মধ্যেই সারা দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে গাজীপুরের নির্বাচন। আর প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেস্টিজ ইস্যু।
তবে ভোটের উৎসব হবে নাকি খুলনা সিটির মতো ভোটের নতুন কোনো নজির তৈরি হবে- এমন প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। শেষ মুহূর্তে নানা শঙ্কা প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে।
যদিও শুরু থেকেই ফুরফুরে মেজাজে আছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল শেষ মুহূর্তে জানিয়েছেন নির্বাচনী হাওয়া তার কাছে ভালো টেকছে না।
গাজীপুরের এ নির্বাচনে মেয়র পদের তালিকায় সাত প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকলেও সবার দৃষ্টিই এখন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর দিকে।
যদিও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার অভিযোগ করেছেন, তাঁর নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে।
হাসান উদ্দিনের প্রশ্ন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না করবেন, তাহলে নির্বাচন করে জনগণের টাকা নষ্ট করার দরকার কী? তা অন্য উন্নয়নের কাজে ব্যয় করতে পারতেন।
এদিকে গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, গাজীপুরের নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য হবে একটা এসিড টেস্ট। আমরা দেখবো তারা কি করে। খুলনা স্টাইলে যদি গাজীপুরে নির্বাচন হয় তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর।
তবে ১৪ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সহিংসতা না থাকলেও কিছু বিতর্ক রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, গাজীপুরের নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তার জন্য যে দায়ী হবেন তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। যে পর্যায়ে যাওয়া প্রয়োজন সে পর্যায়ে আমরা যাবো।
এদিকে নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে সার্বিক নিরাত্তার জন্য বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ১১ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এরিমধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে টহল শুরু করেছেন বিজিবি সদস্যরা।
সিটি কর্পোরেশনের ৪২৫টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৩৩৭টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮৮টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গুলোতে পুলিশ, আনসার ভিডিপিসহ ২৪ জন (১২ জন অস্ত্রধারী) সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ২২ জন (১০ জন অস্ত্রধারীসহ) সদস্য মোতায়েন থাকবে।
আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ৫৭টি সাধারণ এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড বিশিষ্ট এ সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭। এরমধ্যে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৬৭হাজার ৮০১ জন নারী ভোটার।
এ নির্বাচনে ৭ জন মেয়র পদে, ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।