দিনে ভালবাসা আর রাতে নির্যাতন!
বিনোদন ডেস্ক:
ধবধবে সাদা চাদর আর তার একপাশে খোলামেলা দু’টি পা পাশে ছিটেফোঁটা রক্ত। সেই রক্ত, যে রক্তের কথা আজো জনসমক্ষে বলতে গিয়ে ঢোক গিলতে হয় এই সমাজের বেশির ভাগ মহিলাকে।
সে দিন ঢোক গিলতে হয়নি অভিনেত্রী সালোনি চোপড়াকে। সালোনি চোপড়া, যাকে ক্যাটরিনা কইফের ‘কার্বন কপি’ বলেই বেশি নেটিজেনরা চেনেন। দিন কয়েক আগে মেনস্ট্রুয়াল ব্লাডের একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে নেটপাড়ার লোকজনের কাছে রীতিমতো ট্রোলড হয়েছিলেন।
এই সালোনি চোপড়াই এবার সরব হলেন শারীরিক নির্যাতন নিয়ে। একটি ব্লগে নিজের জীবনের নানা পর্যায়ে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন সালোনি। উল্লেখ করেছেন এক সম্পর্কেরও কথা। যে সম্পর্ক সালোনির কাছে ছিল দিনের ভালবাসা, আর রাতের নির্যাতন।
ব্লগে সালোনি লিখছেন, ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, বাবা-মা সন্তানদের ভালবাসেন, কেয়ার করেন বলেই ভুল দেখলে শাসন করেন, মারধর করেন। আমার ভালবাসার পাত্রটিও যখন গায়ে হাত তুলত, সেটাও আমার কাছে যেন ভালবাসাই ছিল।
কিন্তু এই ভালবাসার পাত্রটির কথা গোটা ব্লগের কোথাও উল্লেখ করেননি সালোনি। ব্লগেই এক জায়গায় সালোনি লিখেছেন, যারাই আমাদের একসঙ্গে দেখত, বলত তোমাদের সম্পর্কটা কত সুন্দর। আর সেটা বাইরে থেকে দেখলে যে কারো বলারই কথা।
সকলের সামনে সে আমার খুব কেয়ার করত। সেই কেয়ার যে আদতে দেখনদারি ছিল, মনকে তা বোঝাতে পারতাম না। আর বোঝাতে পারতাম না বলেই দিনের পর দিন বিশ্বাস করে গিয়েছিলাম ওকে। বিশ্বাস করতাম ওর কবিতাগুলোকে। সে বিশ্বাস যে কবে অন্ধবিশ্বাসে বদলে গেল বুঝতেই পারলাম না।
আর এই কবিতার প্রসঙ্গেই চলে আসে কিছু প্রশ্ন। সালোনির সেই প্রেমিক কি তা হলে কোনো কবি? নাকি অন্য কেউ, যে সালোনির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কবিতাই লেখা শুরু করে দিল?
অভিনেতা জাইন খান দুরানি আর সালোনি চোপড়ার প্রেমকাহিনি আজো বলিউডে কান পাতলে শোনা যায়। জাইন খান দুরানি, যিনি খুব সম্প্রতি বলিউডে ডেবিউ করেছেন পরিচালক ওনিরের ‘কুছ ভিগি আলফাজ’ ছবিতে। যেখানে জাইন এক জন রেডিও জকি, কবিতা শুনিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন।
তার সেই ‘আলফাজ’, ব্যারিটোন ভয়েস, এ সব কিছু দেখেই ওনির একটা আস্ত ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। সেই ‘আলফাজ’কেই কি বিশ্বাস করেছিলেন সালোনি? জাইন খান দুরানিই কি তা হলে সেই মানুষটি?
এ প্রসঙ্গে সালোনি চোপড়াকে বললেন, হ্যাঁ, এটা ও-ই। তবে ব্লগটি আমি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য লিখিনি। আর তাই যদি হত, তা হলে আমি ওর নামটাই ব্লগে লিখে দিতাম।
তা হলে কেন এই ব্লগ? সালোনির উত্তর, রোজ আমি নারী নির্যাতনের কথা শুনতে পাই। আমার কাছে অনেক মেসেজও আসে। শুধু ওরা যে একা নয়, আমার সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে যেটা শেয়ার করতেই মূলত ব্লগটা লেখা।
কারণ কি শুধু এটুকুই? প্রথমে উত্তর না দিতে চাইলেও শেষে বললেন, জাইন আমার পরে যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিল, তাকেও অত্যাচার করত। আমার ঘটনা ওকে শেয়ার করার সময় আমি তা জানতে পারি। তখন আমার মনে হয়েছিল জিনিসটা এখানেই বন্ধ হওয়া দরকার। আমাকে মুখ খুলতেই হবে। না হলে এরপর আরো অনেকের সঙ্গেই জাইন এই ধরনের কাজ করবে।
সালোনি জানালেন, জাইনের সঙ্গে তার পরিচয় ২০১৪ সালে দিল্লিতে। সলমন খানের কিক ছবিটিতে বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা কাজ করছিলেন সালোনি। আর জাইন তখন বলিউডে অভিনয়ের একটা সুযোগের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেই চলেছেন। সেই থেকে বন্ধুত্ব। কিছু দিনের মধ্যেই মুম্বই চলে আসেন জাইন। সালোনির বাড়িতেই ওঠেন। সালোনির পরিবারের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। সেখান থেকেই গড়ে ওঠে তাদের সম্পর্ক। এক বছরের কাছাকাছি চলে সেই সম্পর্ক।
ব্লগে এক জায়গায় সালোনি লিখছেন, একদিন হঠাৎই বাড়িতে এসে ও জানায়, ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। কারণ, আমার ব্রায়ের স্ট্র্যাপ দেখা যাচ্ছে, যেটা তার পরিবার কখনওই মেনে নেবে না।
ব্লগে জাইনের নাম না করেই এগুলো লিখেছেন সালোনি। সঙ্গে এ-ও লিখেছেন, সেই সময় আমার জানতে ইচ্ছে করছিল, আমার গায়ে হাত তোলার সময় ওর পরিবারের কী মনে হয়?
২০১৬ সালে আরেকটি ছবি পোস্ট করে ব্যাপক ট্রোল্ড হয়েছিলেন সালোনি। সে ছবিতে ব্রা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সালোনি। আর লিখেছিলেন, ব্রা দেখা গেলে তাতে অসুবিধার কী আছে? আমি এমন কিছু মানুষকে চিনি, যাদের মহিলাদের পোশাকের ভিতর থেকে ব্রা উঁকি মারলে বড্ড অসুবিধা হয়। এখন বোঝা যায়, এই অসুবিধা আসলে কার?’
কিন্তু এ রকম মুখের উপর সোজাসুজি কথা বলা মেয়ের বলিউডে কাজ পেতে তো অসুবিধা হওয়ার কথা। সালোনি বলছেন, আমি নিজেই কাজগুলো একটু বাছাই করে নিই। তবে হ্যাঁ ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাকে বলে, তুমি কেন এত কথা বল? সব কিছুকে কেন প্রকাশ্যে নিয়ে আসো? পার্টিতে গেলে পরিচালকরা বলেন, সফল অভিনেত্রী হতে গেলে কথা কম বলতে হয়, আর হাসতে হয় বেশি। একটু চুপ হয়ে গেলে বোধ হয় আরো বেশি করে কাজ পাব। তবে কাজ পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
সালোনির মতে, সে দিন আর নেই। অভিনয়ের এখন আর কোনো দাম নেই। মেয়েদের এখন সেক্সি হতে হবে, ফর্সা হতে হবে, বিকিনি পরতে হবে। আর এই ইন্ডাস্ট্রি বিশাল ভাবে পুরুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সেখানে নারীর খোলাখুলিভাবে কথা বলার অধিকার এখনো তৈরি হয়নি।
তবে প্যান্ডোরার বাক্সটা যখন খুলতে শুরু করেছে, অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা সালোনির।