বেপরোয়া তালা ইউএনওকে রুখবে কে?
নিজস্ব প্রতিনিধি:
শালা জামায়াত ইসলাম রাজাকারের বাচ্ছা, তুই ডিসি স্যারের নামে বাজে কথা বল্লি কেন। এই বলে শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ। মাসিক সমন্বয় সভার মিটিংয়ের প্রায় শেষ পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এভাবেই উত্তোজিত হয়ে এক চেয়ারম্যানের উপর হামলা করে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে মিটিংয়ের সময় সমাজসেবা অফিসার রফিকুল ইসলাম ইউএনও মহোদয়কে বলেন, স্যার আমার অফিসে একটা বার্থরুমের ব্যবস্থা করা যায় কিনা ? তখন বলার সাথে সাথে তার সঙ্গে অসৎ আচরণ শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বলতে থাকেন, এই আপনি কেডা, আপনি কি বার্থরুম পাওয়ার যোগ্য ? হ্যা স্যার আমি বার্থরুম পাওয়ার যোগ্য। ইউএনও শুরু করেন গালিগালাজ। এরপর মৎস্য কর্মকর্তা হাদিউজ্জামান উপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। বলতে থাকেন, আপনি অফিস করেন না এসব বলে নানা অভিযোগ আর গালিগালজ। এই সময়ে চেয়ারম্যান খলিশখালি মোজাফফর রহমান বলেন, স্যার আমাদের টিআর, কাবিখাটা ডিসি স্যারকে বলে একটু পাশ করিয়ে দেবেন। এ কথার সঙ্গে সুর মেলায় নগরঘাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু। এবার তার উপর ক্ষিপ্ত হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন। গালিগালাজ চলতে থাকে। মারপিট করতে উদ্যত হয়। এমন সময় ধানদিয়া চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্যার আমরা কেউ ত ডিসি স্যারের নামে বাজে কথা বলিনি। তখনই শুরু হয় তার উপর হামলা। উদ্যতপূর্ণ আচরণ করে বলতে থাকেন, এই দরজা বন্ধ করে দে, আমাকে চিনিস। পুলিশে খবর দে। পিটিয়ে মেরে ফেলবো আজ। তখন অন্য চেয়ারম্যানরা মারপিট করা থেকে ঠেকিয়ে দেয়। তারপর চেয়ারম্যানরা মিটিং বর্জন করে বাইরে চলে যায়। এসব কথা জানান তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার।
তিনি বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একই সাথে শাস্তির দাবি জানায়। এ দাবি শুধু আমার নয় সকল চেয়ারম্যানদের। ঘটনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন তালা থানার ওসিকে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ওসি ঘটনাস্থলে এসে বিস্তারিত জানার পর আর চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেননি।
তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন জানান, টিআর, কাবিখা প্রকল্পের বিষয় নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতাহাতি হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে মারপিট করতে আসে। উপস্থিত অন্যান্য চেয়ারম্যানও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঠেকিয়ে দেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন বলেন, অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য তালা থানার ওসিকে বলা হয়েছে।
তালা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল জানান, উপজেলা পরিষদে মাসিক সমন্বয় কমিটির মিটিং ছিলো। মিটিংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেনের সঙ্গে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের ঝগড়া হয়েছে। ইউএনও মহোদয় চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের কথা বললেও গ্রেফতার করা হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. ইফতেকার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি যেটুকু ইউএনও’র মাধ্যমে জেনেছি অসৌজন্যমূলক আচরণ করাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটছে। তার একটা সমাধানও হয়ে গেছে। তাছাড়া ইউএনও’র বিরুদ্ধে সুনিদৃষ্ট কোন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যতপূর্ণ আচরণ ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে মারপিট করার বিষয়টি তালায় সর্বজন স্বকৃত। তালা বাজারের উপর ভ্যানচালককে মারপিট, দুধ বিক্রেতাকে মারপিট, ইজ্ঞিনভ্যান চালককে মারপিট এমন ঘটনা তালাবাসীর সকলের জানা। তবে ক্ষমতার দাপটে থেমে নেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেনের এমন উদ্যতপূর্ণ আচরণ। সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে এসেও এর আগে তিনি ক্ষমতা দেখিয়ে গিয়েছেন। সেখানেই ঝগড়া ও মারপিট করতে উদ্যত হয় একজনকে। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেনের এমন উদ্যতপূর্ণ আচরণ থামাবে কে ? এমন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে সকলের মনে।