ইয়াবা তল্লাশির নামে দেবহাটায় বাড়িতে ঢুকে ভাংচুর মারপিট তুলকালাম:প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
শহর প্রতিনিধি:
‘বাড়িতে ইয়াবা আছে’ এই অভিযোগে সাতক্ষীরার দেবহাটার কুলিয়া গ্রামের এক বাড়িতে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছে সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা।
মঙ্গলবার দুপুরে কুলিয়ার নজরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা করে তারা মহিলাসহ বাড়ির লোকজনকে মারপিট করে বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন নজরুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে এ বিষয়ে জানতে টেলিফোন করা হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাব ইন্সপেক্টর বিজয় কুমার মজুমদার বলেন তাদের মারপিট করা হয়নি। বাড়িতে হামলা চালানো হয়নি । তবে তল্লাশির জন্য ঘরের আসবাবপত্র ওলট পালট করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। সোর্সের মাধ্যমে ৫০০ টাকার ইয়াবা কেনার পর এই অভিযান চালানো হয়। তবে তাদের বাড়িতে কোনা ইয়াবা পাওয়া যায়নি।
কুলিয়ার গাংআটি পাড়ার নজরুল তার পরিবারের সব সদস্যদের সাথে এনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন আজ দুপুরে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কয়েকজন সদস্য তার বাড়িতে হানা দেয়। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা নজরুল ইসলামকে মারপিট করে জানালার সাথে ঝুলিয়ে অর্ধউলঙ্গ করে ফেলে। এতে বাধা দিতে আসলে তারা তার স্ত্রী মোমেনা খাতুনকে একই ভাবে মারধর করে। একই সময়ে তারা তাদের ছেলের বউ নাছিমা খাতুনকেও মারধর করে । নাছিমা জানান তিনি বারবার তাদের বলেছেন ‘আমি অন্তঃসত্ত্বা’। তা সত্ত্বেও তারা তাকে মারপিট করে আহত করেছেন। নজরুলের শ্বশুর ৭৫ বছর বয়সী আবদুল জব্বার গাজিও তাদের মারপিট থেকে রক্ষা পাননি। শুধু মারপিট করেই ক্ষান্ত হননি তারা। তারা বাড়ির সিলিং ফ্যান ছাড়িয়ে ফেলেছেন। দরজা জানালা ভাংচুর করে বিছানা লেপ তোষক ও অন্যান্য আসবাবপত্র টেনে হেঁচড়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এ সময় গ্রামের শতাধিক মানুষ সেখানে জড়ো হয়। সেখানে উপস্থিত থাকা সাবেক ইউপি মেম্বর পরান এ ঘটনার প্রতিবাদ করে জানান এরা মাদক স্মাগলিং করেনা ।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন তিনি পাঁচ বছর আগে চোরাচালানের সাথে কমবেশি সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু সে সময়কার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরের আহবানে দেবহাটা থানায় উপস্থিত হয়ে চোরাচালান ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই থেকে তিনি নিজে মাটি কাটার কাজ ছাড়াও মাছ কেনাবেচা করেন। তার ছেলে মিঠুন ভ্যান চালায় । মাটির কাজও করে। এমনকি ছেলের বউ এলজিইিডির রাস্তার শ্রমিকের কাজ করেন। স্ত্রী মোমেনাও রাস্তায় কাজ করেন বলে জানান তিনি। নজরুল বলেন আমরা চোরাকারবার করিনা। ফলে আমার পরিবারের কারও কাছ থেকে ইয়াবা কেনার কথাও মিথ্যা। সোর্সের ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান ‘এসবের পরও তারা আমার কাছে গাড়ির তেল খরচ চায়। আমি তা দিতে সম্মত হইনি। পরে সাতক্ষীরায় ফিরে এসে তারা টেলিফোন করে বলেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে এ ঘটনা ঘটতো না। আর আজকের ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মাদক মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে’। নজরুল ইসলামের প্রশ্ন ‘ আমি ও আমার পরিবারের কেউ স্মাগলিং করে না। তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে কেনো’। তিনি তার ও তার পরিবারের ওপর এ ধরনের হামলার বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নজরুলের শ্বশুর জব্বার গাজি, মামা শ্বশুর ইনসাফ আলি, স্ত্রী মোমেনা খাতুন, ছেলের বউ অন্তঃসত্ত্বা নাছিমা খাতুন ও ছেলে মিলন ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এসআই বিজয় কুমার ও কনস্টেবল হালিম বলেন মারধর করা হয়নি । তবে অভিযানে কিছুটা ভুল হয়েছে। তাদের বাড়িতে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।