লাল চালের ভাত খেলে কী হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক:
আমাদের বাঙালিদের খাবারের তালিকার সঙ্গে ভাতের সম্পর্ক অনেক গভীর। পোলাও বা সাদা ভাত ছাড়া অনেকের খাবার অসম্পূর্ণ মনে হয়। তবে সাদা ভাতে অনেক বেশি ক্যালোরি ও অপ্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা অনেকেরই প্রায় অজানা।

তাই ভাত পুরোপুরি বাদ দেওয়ার পরিবর্তে লাল চাল খাওয়া স্বাস্থ্যকর বিকল্প পদ্ধতি হতে পারে। লাল চাল স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু। এতে সাদা ভাতের তুলনায় ফাইবার, খনিজ ও ভিটামিন বেশি থাকে।

সুস্বাস্থ্যের জন্য লাল চাল খাওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা হলো:
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: সম্প্রতি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ- এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, লাল চালের ভাত সলিউবল সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও, হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনীর রোগসহ অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে লাল চাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে যারা বেশি লাল চালের মতো পূর্ণশস্য খায় তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কম থাকে।

ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া রোধে: সাদা চালে যেহেতু শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। ফলে অল্প সময়ে রক্তের সুগার অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে লাল চালের ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।

এটি ভাঙতেও শরীরের বেশ সময় লাগে এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ায়। ফলে ডায়াবেটিকস রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয়। সেই সাথে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। এভাবে লাল চাল টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায় এবং রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখে: লাল চালে ফাইবার বা আঁশ থাকে। বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় ও কোলন ক্যান্সারে ঝুঁকি কমে যায়। লাল চালে অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে।

এই ধরনের ফাইবার অন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অ্যাসিড শোষণ রোধ করে যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। এছাড়াও, এই ধরনের ফাইবার শরীরের ভেতরে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে অবদান রাখে।

দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ: লাল চালের কুড়ায় ‘ফ্ল্যাভোনয়েড’ নামক কিছু রোগ প্রতিরোধক পদার্থ থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, লাল চালে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে। এভাবে এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় লাল চালের ভাত, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় লাল চাল ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। এতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাছাড়া, লাল চালে ম্যাঙ্গানিজ এবং ফসফরাস রয়েছে, যা শরীরের চর্বি সংশ্লেষণ করতে এবং স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে:

আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড-সমৃদ্ধ হওয়ায় লাল চাল রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ লাল চাল হাড়কে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

লাল চাল রান্নার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ: লাল চাল সাধারণ চালের তুলনায় একটু বেশি সময় নিয়ে রান্না করতে হয়। ভালোভাবে ধুয়ে ৬-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে রান্নার সময় কমে যায়।সাধারণ ভাতের মতো চুলায় বা রাইস কুকারে সহজেই রান্না করা যায়।

লাল চাল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ: প্রথমে নতুন কিছু খেলে সেটার স্বাদ ভালো না-ই লাগতে পারে। এক্ষেত্রে একেবারে পুরোটা খাবারের তালিকা না বদলে অল্প অল্প করে বদলাতে পারেন।সাদা ভাতের সাথে কিছু লাল ভাত মিশিয়ে খেতে পারেন। রুটি খেলে একটা সাদা আটার রুটি, তার সাথে একটা লাল আটার রুটি খেতে পারেন।

তারপর ধীরে ধীরে আপনি হয়তো সেই স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। লাল আটা ও চাল খেলেই যে পরিমাণে বেশী খাওয়া যাবে, তা কিন্তু না। সুষম খাবারের অংশ হিসেবে লাল চাল আর লাল আটা পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।

লাল চালের ভাত শুধু সুস্বাদু নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। নিয়মিত এই চাল খেলে শরীর সুস্থ থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমবে। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য লাল চালের ভাতকে খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)