সাতক্ষীরায় সাংবাদিককে সন্ত্রাসী স্টাইলে তুলে এনে মারপিট করে পুলিশে দিলো স্বেচ্ছসেবক দল নেতা
নিজস্ব প্রতিনিধি:যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার সাংবাদিক নাজমুল হাসান মিঠুকে সন্ত্রাসী স্টাইলে তুলে এনে মারপিট করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শরিফুল ইসলাম। রবিবার সকাল ১১ টার দিকে পাটকেলঘাটাস্থ এসিল্যান্ড অফিসের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
মিঠুর সহকর্মী মিঠুন বলেন, মিঠু ও আমি যৌথভাবে একটি অফিস নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করি। সকাল ১১ টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে এসে শরিফুলসহ ৪ জন মিঠুকে তুলে নিয়ে যায়।
সাংবাদিক শেখ নাজমুল হাসান মিঠুর স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন, ‘গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে কুমিরা মহিলা কলেজের সামনে আমার স্বামীকে একা পেয়ে ব্যাপক মারপিট করে তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শরিফুল ইসলাম ও বিএনপি কর্মী মোশাররফ হোসেন। এরপর তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শরিফুল ও বিএনপি কর্মী মোশাররফ। পরবর্তীতে মোটরসাইকেল উদ্ধারের জন্য কুমিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা, তালা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাসহ একাধিক বিএনপির নেতার্মীর সাথে আমরা ও আমাদের লোকজন যোগাযোগ করলেও কোন সুরাহা হয়নি। বরং আমার স্বামীর ওই মোটরসাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জমিদখলসহ নানান অপকর্ম করতে থাকে শরিফুল, মোশাররফসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। ফলে মোটরসাইকেল উদ্ধারের জন্য আমার শ্বশুর নজরুল ইসলাম শেখ বাদী হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারী আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত করতে সিআইডি গত শনিবার এলাকায় আসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শরিফুল, মোশাররফ, আমিরসহ ৪ জন সন্ত্রাসী স্টাইলে আমার স্বামীকে পাটকেলঘটাস্থ এসিল্যান্ড অফিসের সামনের অফিস থেকে তুলে নিয়ে কুমিরা বাসস্ট্যান্ডে আসে এবং তাকে ব্যাপক মারপিট করে। পরবর্তীতে তারা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানার এসআই ইমামুল এসে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আধাঘন্টার মধ্যে বিএনপির অফিস ভাংচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করে দেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্বামীর মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করলো শরিফুল গং, তাকে অফিস থেকে তুলে এনে মারপিট করলো শরিফুলগং অথচ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো আমার স্বামীকে বিএনপির অফিস ভাংচুরের মামলায় চালান করে দিল। বিএনপির অফিস ভাংচুরের ঘটনা আমার স্বামী জানেওনা বা সে ওই ঘটনার সাথে জড়িতও না। পাটকেলঘাটা থানার এসআই ইমামুল আমার স্বামী ও ভিকটিম মিঠুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ছিনতাইকারী ও হামলাকারী স্বেচ্ছসেবক দল নেতা শরিফুলগংদের কথায় বায়াস্থ হয়ে আমার স্বামীকে চালান করে দিয়েছে। যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
গ্রেপ্তার সাংবাদিক নাজমুল হাসান মিঠু বলেন, ‘আমার মোটরসাইকেলটি উদ্ধারের জন্য আমার বাবা আদালতে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলার তদন্ত হতেনা হতেই শরিফুলগং আমাকে তুলে এনে মারপিট করে পুলিশের হাতে তুলে দিল। আর পুলিশ আমাকে নিয়মিত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান করে দিল। অথচ আমাকে তুলে এনে মারপিট করা, আমার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ব্যাপারে কোন কথই শোনেনি।’
অভিযুক্ত কুমিরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মোটরসাইকেল ছিনতাই সংক্রান্ত ব্যাপারে মিঠুর বাবা বাদী হয়ে আদালতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। এ কারণে মিঠুকে তার পাটকেলঘাটা বাজারের অফিস থেকে তুলে এনে কুমিরা বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
আপনিতো মোটরসাইকেল ছিনতাই করেছিলেন সত্য, তাহলে মামলা মিথ্যা হলো কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেল কেড়ে নিয়েছিলাম সত্য তবে কেউতো মোটরসাইকেল নিতে আসেনি।’
আপনি কাউকে তুলে এনে পুলিশে সোপর্দ করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পাটকেলঘাটা থানার এসআই ইমামুল বলেন, ‘নাজমুল হাসান মিঠুকে আটক করে আমাদের সংবাদ দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আমরা ঘটনাস্থলে যেয়ে মিঠুকে উদ্ধার করি এবং নিয়মিত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছি।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা কাউকে আটকে আপনাদের হাতে তুলে দিলেই আপনারা তাকে নিয়মিত মামলায় চালান দিতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব কথাতো আর মোবাইলে বলা যাবেনা, আপনি নোঝেনতো, আপনি সাংবাদিক, আমার কথা রেকর্ড করবেন। ওয়াটসএপে গেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।’ বলে তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’
সহকারী পুলিশ সুপার (তালা সার্কেল) হাসানুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির অফিস ভাংচুরের মামলায় সন্দীগ্ধ আসামি হিসেবে নাজমুল হাসান মিঠুকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া নাজমুল হাসান মিঠুকে কেউ যদি তুলে এনে মারপিট করে এবং ওই ঘটনায় যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এড. কামরুজ্জামান ভুট্টো বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমানের স্পষ্ট বার্তা ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করতে পারবেনা।’ সুতরাং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ যদি সাংবাদিককে তুলে এনে মারপিট করে বা অন্য কোন অপকর্ম করে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’