বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, কোন দিকে ট্রাম্পের অভিযোগ

আন্তজার্তিক ডেস্ক:সংকটের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একটি বিশেষ দায়িত্ব পালনের রেওয়াজ আছে, যাকে বলা হয় কনসোলার-ইন-চিফ। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউসের প্রেস রুমের ক্যামেরার সামনে সেই দায়িত্ব পালন করতেই দাঁড়িয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কনসোলার-ইন-চিফের প্রচলিত বাংলা না থাকলেও প্রধান সান্ত্বনাদানকারী ব্যক্তি হিসেবে একে বর্ণনা করা যেতে পারে। সংকটের মুহূর্তে জনগণকে সান্ত্বনা ও আশ্বাসের বাণী শোনানো তার কাজ।সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের সঙ্গে সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, পুরো দেশ শোকাহত।দুর্ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে উদ্ধার তৎপরতায় সাড়া দেওয়া ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ট্রাম্প। এরপর তিনি সরাসরি মূল বক্তব্যে চলে আসেন। যে বক্তব্য ধারণা দেয় তার নতুন মেয়াদ কীভাবে খুব ভিন্নরকম হতে চলেছে। দ্রুতই দোষারোপের আঙুল তোলা, অলিখিত এবং যুদ্ধংদেহি– এই সবগুলো বিষয় স্পষ্ট ছিল তার কথার ধরনে। ট্রাম্প বলেছেন, এই দুর্ঘটনার কারণ জানি না আমরা, তবে বেশ কিছু দৃঢ় ধারণা ও মতামত পাওয়া যাচ্ছে।
তার অনুমান, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের আমলে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে নিম্নমানের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার নিয়োগই এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিগুলো’ বরাবরই ট্রাম্প এবং তার সহযোগী রিপাবলিকানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই তারা এ ধরনের কর্মসূচি বাতিলে উদ্যোগ নেয়। তাদের দাবি, এসব কর্মসূচিকে আমেরিকানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে এবং দুর্বল বানিয়েছে দেশকে। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই এর কারণ হিসেবে তাদের সেই বক্তব্যকেই সামনে নিয়ে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে ছিলেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট, পরিবহন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা।সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক আছে– এমন কোনো প্রমাণ না দিলেও নিজেদের বক্তব্যে অটল ছিলেন তারা।একজন সাংবাদিক জানতে চান, তদন্ত মাত্র শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই তিনি (ট্রাম্প) কীভাবে ডাইভারসিটি প্রোগ্রামকে (বৈচিত্র্যমূলক কর্মসূচি) দোষ দিচ্ছেনএর জবাবে ট্রাম্প বলেছেন,বিকজ, আই হ্যাভ কমন সেন্স।” (কারণ, আমার সাধারণ জ্ঞান আছে।) এর আগে পরে অবশ্য ট্রাম্প উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার কোনো নিশ্চিত কারণ জানা যায়নি।ট্রাম্প বলেন, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির কারণে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অক্ষম বা প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।শ্রবণ-দৃষ্টি বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন, আংশিক ও সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত, মৃগীরোগী, গুরুতর বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, মানসিক অক্ষমতা এবং বামনত্ব সংক্রান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। এফএএর বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নিয়োগ কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটের আর্কাইভ ভার্সনেও একই রকম একটি তালিকা দেওয়া ছিল।ডিসেম্বরে ওয়েবসাইটটি নামিয়ে নেওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটি কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ‘সুনির্দিষ্ট অক্ষমতা’ থাকা ব্যক্তিদের নিয়োগের বিষয় দেখভাল করতো।এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার পদের জন্য ‘সহজাত প্রতিভাবান মেধাবী’ দরকার বলে মনে করছেন ট্রাম্প।কিন্তু, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য আনার সেই প্রয়াস কীভাবে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার পদটিকে প্রভাবিত করেছে তা স্পষ্ট নয়। এফএএ’র ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে, যার মধ্যে একটি ভগ্নাংশ মাত্র ওই পদে কাজ করে।তবে বৈচিত্র্য নিশ্চিতের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনার জবাবে গত বছর সংস্থাটি একটি বিবৃতি দেয়। যাতে বলা হয়, ‘পদ অনুযায়ী’ যে কোনো নিয়োগে ‘যথাযথ যোগ্যতা’ নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে মার্কিন কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের সঙ্গে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই উড়োযানের কোনো আরোহীই বেঁচে নেই।যাত্রীবাহী বিমানটিতে মোট ৬০ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। আর হেলিকপ্টারে তিনজন মার্কিন সৈন্য ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ফিগার স্কেটিং সংস্থা ও বোস্টনের একটি ক্লাব জানিয়েছে, বিমানের যাত্রীদের মধ্যে মার্কিন ও রাশিয়ান ফিগার স্কেটিং খেলোয়াড়রা ছিলেন।এখন পর্যন্ত ২৮ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। এর মধ্যে ২৭ জন বিমানের, একজন হেলিকপ্টারের আরোহী ছিলেন।যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার রাত নয়টার দিকে রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এর কাছাকাছি সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। ওয়াশিংটন ডিসির জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানায়, বিমানটি পোটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে।ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় পড়া বিমানটি কানসাসের উইচিটা থেকে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)