কুমিল্লায় ৮ মডেল মসজিদে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৪০ লাখ টাকার বেশি
অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লায় ৮টি মডেল মসজিদে ৪০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। মুসল্লিদের দানের টাকায় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার কথা থাকলেও, মডেল মসজিদের বিশাল কমপ্লেক্সে যে পরিমাণ বিল আসে তা পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মডেল মসজিদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, মসজিদের আয় থেকে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
কুমিল্লা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন জানান, কুমিল্লা জেলায় মোট ১১টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত নামাজ শুরু হয়েছে ৯টিতে, যাদের মধ্যে ৮টি মসজিদেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৪০ লাখ ৬৪ হাজর ৩০৬ টাকা। শুধু মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সম্মানি পান, বাকি সব খরচ মসজিদগুলোতে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের দানের টাকা থেকে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু দানের টাকায় এত বড় কমপ্লেক্সের প্রতিমাসের বৈদ্যুতিক বিল, পরিচ্ছন্নতা এবং অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ সম্ভব নয়।
মডেল মসজিদের এক একটি নামাজের কক্ষে দামি ঝাড়বাতি, শত শত লাইট, ফ্যান, এসি চালানো হয়। নারী-পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজের স্থান, পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, হজ্জ যাত্রীদের নিবন্ধন, পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা, দাওয়াতি কার্যক্রম, হিফজ মাদ্রাসা, মক্তব, মৃত ব্যক্তির গোসলের ব্যবস্থা, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসন প্রকল্পসহ বহুমুখী ইসলামি কার্যক্রম ও সেবার কথা বলা আছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা মডেল মসজিদের বৈদ্যুতিক বিল বকেয়া ১০ লাখ ৯৯০ টাকা, যা গত ২৩ মাসের বিল। এ ছাড়া কুমিল্লা জেলা মডেল মসজিদে বৈদ্যুতিক বিল বকেয়া ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪২ টাকা, বুড়িচং উপজেলা মডেল মসজিদে বিল বকেয়া ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬৫২ টাকা, নাঙ্গলকোট উপজেলা মডেল মসজিদে বিল বকেয়া ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪১ টাকা, চান্দিনা উপজেলা মডেল মসজিদে বিল বকেয়া ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮ টাকা, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মডেল মসজিদের বিল বকেয়া পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ৬৮৪ টাকা, দেবিদ্বার মডেল মসজিদের বিল বকেয়া ৮৬ হাজার ৬৪৯ টাকা এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মডেল মসজিদে ৫৫ হাজার টাকা।
দাউদকান্দি উপজেলা মডেল মসজিদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এম এ সাত্তার জানান, প্রতিমাসে গড়ে ৪০ হাজার টাকার বেশি বিল আসে মডেল মসজিদে। গরমকালে আরও বেশি আসে। বৈদ্যুতিক বিল ছাড়াও মসজিদের অন্যান্য দেখভালের অর্থ দানের টাকা থেকে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু দানবাক্সে এত টাকা জমে না। যে কারণে বৈদ্যুতিক বিল জমে জমে ১০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
মডেল মসজিদগুলোতে বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার কারণে বিল বেশি আসে বলেও জানান তিনি।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩– এর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নুরুল হোসাইন বলেন, ‘মডেল মসজিদগুলো বৈদ্যুতিক সংযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো কিভাবে পরিবর্তন করা যায় আমরা তার ব্যবস্থা করছি। তবে মডেল মসজিদগুলোতে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ বাড়ছে।’
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘মসজিদের নিজস্ব কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই, মুসল্লিদের দান করা টাকা থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। মসজিদে বেশি মুসল্লির সমাগম না হলে দান করা টাকাও বাড়বে না। বৈদ্যুতিক বিল বকেয়া জমা পড়েছে। এ নিয়ে আমরা বিপাকে আছি। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কিছুটা সহযোগিতা করা হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ বিল পরিশোধের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে।’
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, ‘অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের চাপ কমাতে মডেল মসজিদগুলোর বৈদ্যুতিক সংযোগে লোড কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মডেল মসজিদগুলো এমন জায়গায় যে সেখানে কোনো বাণিজ্যিক ব্যবস্থা করেও এসব ব্যয় নির্বাহের সুযোগ নেই, সুতরাং দানের টাকার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে এসব খরচ। আমরা জেলা প্রশাসন থেকে কিছুটা সহযোগিতা করছি, এর বাইরে আসলে কিছুই করার সুযোগ নেই।’