বিপিএল মনে রাখবে এবারের চট্টগ্রামকে
স্পোর্টস ডেস্ক:বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) মানেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বাড়তি রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর আবেগের এক অনন্য মেলবন্ধন। তবে গেল কয়েক আসরে বিপিএলের সেই পুরোনো জৌলুস যেন একটু ম্লান হয়ে গিয়েছিল। গ্যালারির ফাঁকা চেয়ার, উদাসীন দর্শক এবং টুর্নামেন্ট ঘিরে কমে আসা আগ্রহ অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল। বিপিএল কি আর আগের মতো মাতিয়ে রাখতে পারবে? তবে এবারের আসরের শুরু থেকেই সেই ভাবনা খানিকটা কেটে গেছে।
মাঠের বাইরের নানান আলোচনা বাদ দিলে ঢাকা-সিলেটে অনুষ্ঠিত হওয়া খেলাগুলো ছিল জমজমাট। যেমন গ্যালারিতে দর্শকদের উপস্থিতি, তেমনি মাঠে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো জয়ের জন্য লড়াই করে। ব্যতিক্রম ঘটেনি চট্টগ্রাম পর্বেও। এখানে অনুষ্ঠিত হওয়া ছয় দিনে ১২ ম্যাচের মধ্যে দুই একটা ম্যাচ বাদে সবগুলোই ছিল টানটান উত্তেজনার। দর্শকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো, যা গেল কয়েক আসরে দেখা যায়নি। প্রতি বারই বিপিএলের খেলা তিনটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে একটি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। শুরুর দিকে এই স্টেডিয়ামের ম্যাচগুলোকে ঘিরে দর্শকদের যেমন চাহিদা দেখা যেত তা যেন গেল কয়েক আসর ধরে খানিকটা কমে গিয়েছিল। তাতে গ্যালারিতেও সমর্থকদের উপস্থিতি কম দেখা যেত। তবে এবার যেন সব হিসাব বদলে গেল। সাগরিকার স্টেডিয়ামে দর্শকদের উপস্থিতিতে যেন ফের প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিপিএল। প্রথম ম্যাচ থেকেই গ্যালারিভরা দর্শক, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, ব্যানার-ফেস্টুন আর ঢোল বাদ্যের আওয়াজে চট্টগ্রাম পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের এক মহোৎসবে। সাগরপাড়ের এই শহর যেন দেখিয়ে দিল, বিপিএল এখনো এখানকার ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ের স্পন্দন!
চট্টগ্রাম পর্বে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ও ঢাকা ক্যাপিটালস। ঐ ম্যাচ থেকেই দেখা গিয়েছে অন্যরকম উত্তাপ। ঐ ম্যাচের পর থেকে প্রায় প্রতি ম্যাচেই মানুষের ঢল, স্টেডিয়ামের আশপাশে ক্রিকেটপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস, টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন-সবই যেন জানান দিচ্ছিল, চট্টগ্রাম বিপিএলকে এক অন্যরকম রঙে রাঙিয়ে তুলেছে। মাঠে নেমে খেলোয়াড়েরাও বুঝিয়ে দিয়েছে, ক্রিকেট কেবল ব্যাট-বলের লড়াই নয়, এটি আবেগেরও খেলা। একদিকে তানজিদ তামিম, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, রিশাদের ঝড়ো ইনিংস, অন্যদিকে তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুরদের বিধ্বংসী বোলিং-সবকিছুই দর্শকদের দারুণভাবে টেনেছে। বিশেষ করে স্থানীয় দল চিটাগং কিংস আর ঘরের ছেলে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালের ম্যাচ হলে তো কথাই নেই! পুরো গ্যালারি পরিণত হয় সমুদ্রের গর্জনের মতো এক সুরে, যা এই শহরের শেষ ম্যাচ অবধি অব্যাহত ছিল।এ দিকে চট্টগ্রাম পর্বের শুরু থেকেই ফ্রাঞ্চাইজিদের কাছে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট বকেয়া থাকার বিষয়টি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শুরু হয় মাঠের বাইরের বিতর্ক। আসরের শুরু থেকেই খেলোয়াড়দের পাওনা বকেয়া রয়েছে শোনা গেলেও জোরালোভাবে তা সামনে আসেনি। সব দলই তাদের খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে চট্টগ্রাম পর্বে এসে ম্যাচের আগেই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানান এবারের আসরের নতুন ফ্রাঞ্চাইজি দুর্বার রাজশাহীর খেলোয়াড়রা। তাতে বয়কট করেন অনুশীলন, পরে ম্যাচ না খেলারও হুমকি দেন তারা। পরে এ বিষয়ে সমাধান করতে আসতে হয় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে। পরে একে একে সামনে আসে বাকি ফ্রাঞ্চাইজিগুলোরও খেলোয়াড়দের টাকা বকেয়া রাখার কথা। সেটা নিয়ে সমালোচনা থামার আগেই নতুন করে এই বিতর্কের মধ্যে ঢুকে যায় পাতানো ম্যাচের সন্দেহ।চলমান আসরের কয়েকটি ম্যাচে মাঠে কিছু দৃষ্টিকটু ঘটনা ঘটছিল তবে সবগুলোকেই খেলার অংশ হিসেবে দেখছিল সমর্থকরা। তবে বন্দরনগরীর কয়েকটি ম্যাচে এমন কিছু ইনিংস হয়, যা দেখার পর আর স্বাভাবিকভাবে বিষয়টিকে নিতে পারে না ক্রিকেটপ্রেমীরা। মূলত তার পরই এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা, যা চলমান রয়েছে।