সাতক্ষীরা ০৩ আসনে এমপি পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস এর নাম ঘোষণা

জি এম মুজিবুর রহমানঃ সাতক্ষীরা ০৩ আসনের সংসদ সদস্য পদে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল কুদ্দুস এর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার বিকালে উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়ন বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন থেকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক স ম হেদায়েতুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এ ঘোষণা প্রদান করেন।অনুষ্ঠানে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রবীণ নেতা শেখ আব্দুর রশিদ, আব্দুল আলিম, রবিউল আউয়াল ছোট, যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুল ইসলাম, সদস্য সচিব আবু জাহিদ সোহাগ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নূর-ই-আলম সরোয়ার লিটন, জাসাস এর আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত গণমানুষের নেতা হিসেবে তাকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলের উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
মোঃ রুহুল কুদ্দুস এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাড়ি আনুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম একসরা গ্রামে। ইউনাইটেড একাডেমী প্রতাপনগর থেকে এস এসসি পাসের পর বিএল কলেজ থেকে ডিগ্রী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাস করি। ১৯৮৬-৮৭ সালে বিএল কলেজের জাতীয়তাবাদী ছাত্রসংসদের মানবিক শাখার শ্রেণি প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতির মাঠে নেমেছিলাম। এরপর ওই কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি ১৯৮৬-৯০ পর্যন্ত। ১৯৯০-৯৩ পর্যন্ত খুলনা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এ সময়েই শিবির কর্মীর গুলিতে আহত হয়ে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি।
বাবা মায়ের কথায় এরপর আশাশুনিতে এসে ১৯৯৭-২০০২ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর ২০০২-০৮ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব এবং ২০০৯-২০২১ সাল পর্যন্ত বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেছি। এরমধ্যে তৎকালীন সভাপতি ও কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করলে ২০২১-২২ পর্যন্ত আহ্বায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছি।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ বার নির্বাচিত হয়েছি। আওয়ামী দুঃশাসন ও প্রহসনের নির্বাচনেও আমাকে তারা পরাজিত করতে পারেনি। আমি মিথ্যা মামলায় জেলে থেকেও নির্বাচনে জয়লাভ করেছি। আমার স্ত্রী জাহানারা খাতুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মজিদা খানমকে পরাজিত করেন।
শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে ২০১৩ সাল থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুঃশাসনে তার দোসরদের নির্মম নির্যাতন সহ ৬৮টি মিথ্যা নাশকতা মামলায় জড়িয়ে আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ২০১৩-১৪-১৬ সালে এবং যতবার প্রহসনের নির্বাচন এসেছে ততবারই আমাকে প্রশাসন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছে। এরমধ্যে দুই বার ক্রসফায়ারে নিয়ে গুলি করে হত্যার নকশা তৈরি করা হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে ও জনগণের দোয়ায় আবার ফিরে এসেছি। কমপক্ষে ৩ বার আমার বসত ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। বিএনপি করার অপরাধে আমার পিতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী। তৎকালীন পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দাপটে সেদিন আমি আমার বাবার জানাজা নামাজও আদায় করতে পারিনি। স্বৈরাচারের দোসররা দক্ষিণ একসরা মৌজায় আমার ৭২ বিঘা ধানের জমি ও ৮০ বিঘা মৎস্য ঘের থেকে বেদখল করে দেয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও আমাকে তারা এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীরা কে কোথায় কিভাবে আছে সবসময়ই খোঁজ খবর নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী হামলা মামলায় আমরা যারা জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলখানায় এবং আদালত চত্বরে কাটিয়েছি সেসব নেতাকর্মীরা তার সাক্ষ্য দেবে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমি আমার এলাকায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি‌। অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশী অদৃশ্য কোন নেতাকে ৫ আগস্টের আগে এবং পরে এখনও আশাশুনিতে কেউ আসতে দেখেনি। তাদের ধারণা জনগণের কাছে যাওয়া লাগবে না তারা উল্টে জনগণের কাছে ভোট পাবে।
একটা নির্যাতিত, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী ও পরীক্ষিত পরিবার হিসেবে উপজেলার মানুষ আমাকে এবং আমার পরিবারের প্রতি সবসময়ই আস্থা রেখেছেন। তাই আমি ও আমার উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা ০৩ আসনে সংসদ সদস্য পদে আমাকে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করবেন।
অতীতে দেখেছি এ আসনে বিএনপির কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হওয়ায় আশাশুনি এখনও অবহেলিত ও বঞ্চিত। তাই আশাশুনিতে পরিপূর্ণ উন্নয়ন চাইলে আশাশুনি উপজেলার মানুষ এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার কোন বিকল্প নেই। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)