হত্যার আগে স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ নিয়েছিলেন কাউন্সিলর টিপু

ডেস্ক রিপোর্ট:কক্সবাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে হোটেল থেকে স্ত্রী সাবিহা আক্তারকে ফোন দিয়ে দুই সন্তানের খোঁজ নিয়েছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী টিপু।‘বুধবার মাগরিবের নামাজের পর আমাকে (সাবিহা আক্তার) ফোন দিয়ে বলে, নামাজ পড়েছ, বাচ্চারা কোথায়? তখন আমি বললাম, বাচ্চারা আছে, চা খেয়ে আমি বাচ্চাদের পড়তে বসাব। আর কোনো দিন সে আর আমাদের খোঁজ নেবে না। বাচ্চাদের কথাও জানতে চাইবে না। আমার স্বামীকে গাজী কামরুল (সাবেক চরমপন্থি দল নেতা) প্রায়ই মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিতেন। আমার স্বামীকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর দেয়ানার হোসেন শাহ রোডের ২১২ নম্বর রোডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী টিপুর বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী সাবিহা আক্তার আর্তনাদ করতে করতে এসব কথা বলেন।এ সময় বাড়ির সামনে দেখা যায়, বহু মানুষের জটলা। সেই জটলার মধ্যে সদ্য পিতৃহারা টিপুর ছেলে তাসিন রব্বানী রাহাতকে (১৩) পাশে নিয়ে বসে আছেন টিপুর বৃদ্ধ পিতা গোলাম আকবর। ছেলের শোকে তিনি তখন কাতর। যেন কান্নাও ভুলে গেছেন। খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাহাতও বাক্রুদ্ধ। তারা যেন কথা হারিয়ে ফেলেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে কেসিসির সদ্য অপসারিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপু কেসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত আরেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসান ইফতেখার চালুর সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। বুধবার সকালে তারা কক্সবাজারে পৌঁছে একটি হোটেলে ছিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সেই হোটেলে কাটান। রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন হোটেল সী গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন গোলাম রব্বানী টিপু।টিপুর পরিবার সূত্র জানায়, কক্সবাজারে অনেক আগে থেকেই গোলাম রাব্বানী টিপুর মাছের ব্যবসা ছিল। এর আগে লবণের ব্যবসাও ছিল টিপুর। এ ব্যবসার কারণে টিপুর কক্সবাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তবে বর্তমানে সে জমিজমার ব্যবসা করতেন।তবে, স্থানীয়দের ধারণা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে গোলাম রাব্বানী টিপুকে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এলাকার অনেকেই জড়িত রয়েছে।তারা জানান, টিপু সব সময় অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে চলাফেরা করতেন। আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে তার অনেক শত্রু ছিল।টিপুর স্ত্রী সাবিহা আক্তার বলেন, ‘তার স্বামীর এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি মানুষের সালিশ-দরবার করতেন। এটা ভালো চোখে দেখতেন না এক সময়ের শীর্ষ চরমপন্থি দলনেতা গাজী কামরুল। বিভিন্ন সময়ে আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিতেন। গাজী কামরুলই মেইন। সে-ই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। সে কারো ভালো চায় না।টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা বলেন, খুলনার দৌলতপুর, পাবলাকেন্দ্রিক শত্রুরাই আমার ভাই গোলাম রাব্বানী টিপুকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করেছে। আর এর পেছনে সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার চালুর হাত রয়েছে। তারা বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছে।নিহত টিপুর বৃদ্ধ পিতা গোলাম আকবর কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে খুব ভালো ছিল। সে মানুষের উপকার করত। কারো কোনো ক্ষতি করেনি। আমার সেই ছেলেকে বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব। আমার সামনে আমার ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ আনবে, তা আমি সহ্য করতে পারব না।নগরীর দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, গোলাম রাব্বানী টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় আগে হত্যাকাণ্ডসহ দুটি মামলা ছিল। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই। এছাড়া ৫ আগস্টের পরে খালিশপুর থানায় তার নামে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে তার লাশ এখনো (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা) কক্সবাজারে রয়েছে। বাড়িতে পৌঁছেনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)