সাতক্ষীরা মায়ের বাড়িতে বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের মুর্তি উন্মাচন

রঘুনাথ খাঁঃরহুরুপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” স্বামী বিবেকানন্দের “সখার প্রতি” কবিতার অন্তিম দুটি চরণ তুলে ধরে বাগেরহাট রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী গুরু সেবানন্দজী মহারাজ বলেছেন, “শক্তিই জীবন, দুর্বলতাই মৃত্যু” এটাই হিন্দু জাতির মূল মন্ত্র। ১৮৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় বক্তৃতার মাধ্যমে স্বামীজী পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দু ধর্ম প্রচার করেন। জাত পাত ভুলে মানুষের সেবায় নিজেকে কিভাবে সমর্পণ করা যায় তার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়িতে বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের মুর্তি উন্মোচন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যেসেবানন্দজী মহারাজ এসব কথা বলেন।প্রধান অতিথি আরো বলেন, পাশ্চাত্য অভিজ্ঞতা স্বামীজীর কাছে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের মধ্যে সহযোগতিা এবং মৌলিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মধ্যেই মানুষের ভবিষ্যৎ বিদ্যমান বলে তিনি মনে করতেন। দেশমাতৃকার সেবার জন্য বিবেকানন্দ যুবসমাজকে জীবন উৎসর্গ করার আহবান জানান। সাধারণ মানুষের নবজীবন দানের উদ্দেশ্যে সেবামূলক কাজ করা, সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে মুক্তি এবং অমানবিক কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে একটি দৃঢ় জাতিস্বত্বা গঠণ করা ছিল তার লক্ষ্য। তার স্বদেশ সেবামূলক আবেদনে ভারতের আদর্শবাদি যুবসমাজ অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এমনকি দেশের স্বাধীনতার জন্য তারা মৃত্যুবরণ করতেও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল।
জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ, জয়মহাপ্রভু সেবক সংঘের সভাপতি ডাঃ সুশান্ত ঘোষ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, মাধব চৈতন্য ব্রহ্মচারি, জেলা মন্দির সমিতির সহসভাপতি অ্যাড. তারক চন্দ্র মিত্র, সারদা সংঘের সভাপতি কল্যাণী রায়, বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি নয়ন কুমার সানা, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরুপ ঘোষ, সমাজকর্মী দীলিপ চ্যাটাজী, প্রমুখ।বক্তারা বলেন, শিকাগো বক্তৃতার পর ব্রিটেন থেকে তার সবচেয়ে অনুরক্ত পাশ্চাত্য শিষ্য মিস মার্গারেট নোবেলের আগমন ঘটে। তিনি পরবর্তীতে ভারতীয় ভগ্নি তথা সিস্টার নিবেদিতা (উৎসর্গকৃত প্রাণ) নাম গ্রহণ করে এ নামেই পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের সঙ্ড়ে যুক্ত হন এবং বাকী জীবন ভারতবর্ষেই অতিবাহিত করেন।১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর দুই বছর পর এ প্রতিষ্ঠানের ভৌত কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কলকাতার উপকণ্ঠে বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠিত করেন। ভারতের আধ্ম্যাতিক উত্তরাধিকার জ্ঞানলাভ করার লক্ষ্যে তিনি বেদান্ত ও শ্রীরামকৃষ্ণের শিক্ষা প্রচারের জন্য উদ্বোধন নামে একটি বাংলা এবং প্রবুদ্ধ ভারত নামে একটি ইংরাজী পত্রিকা প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়বার আমেরিকা ও ইউরোপ ভ্রমণের পর তিনি মাত্র কয়েক বছর জীবিত ছিলেন। এ সময়ের মধ্যেই স্বামীজী রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ হোম, রামকৃষ্ণ পাঠশালা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করেন।দেরীতে হলেও জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণাজী তারে স্বর্গীয় পিতা বিশ্বেশ্বর ব্যণার্জী ও মাতা স্বর্গীয় পদ্মরানী বৗানার্জীর স্মরনে স্বামীজীর ১৬২ তম জন্মতিথির আগেই স্বামী বিবেকানন্দ’র মুত্র্ িপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।অনুষ্ঠান শেষে স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)