চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর
অনলাইন ডেস্ক:
রাষ্ট্রদোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মফিজুল হক ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, আজ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে, সকাল সোয়া ১০টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে পৌঁছেন সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর একটি দল। এ শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। িএ মামলায় গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ এনে গত ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মোহাম্মদ ফিরোজ খান নামে একজন। কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করা হয়। এতে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।
২৫ নভেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন ২৬ নভেম্বর ভোরে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
সেদিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপরই আদালত এলাকায় শুরু হয় তার অনুসারীদের তাণ্ডব। কারাগারে নেয়ার জন্য তাকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানটি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় ২৯ নভেম্বর রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। এতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন- কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোড সেবক কলোনি এলাকার বাসিন্দা চন্দন, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, দুর্লভ দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
একইদিন কোতোয়ালি থানায় আরো একটি মামলা করেন আলিফের বড়ভাই খানে আলম। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
এর আগে, পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। এছাড়াও ৩ ডিসেম্বর একই অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলরসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী।
৮ ডিসেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন এনামুল হক নামে একজন। এনামুল নিজেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মী বলে উল্লেখ করেন। এতে ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আবেদনটি গ্রহণ করে কোতোয়ালি থানার ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।