মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে সহশিক্ষা কার্যক্রম
সহশিক্ষা কার্যক্রম কী :শিক্ষার্থীদের শিখন ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি যে সকল বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয় সেই বিষয়াবলীর সমষ্টিকে সহশিক্ষা কার্যক্রম বলে। সহশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রকাশমূলক শিক্ষাও বলা হয়। অর্থাৎ সহশিক্ষা কার্যক্রম হচ্ছে শিশুর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো, যেটা প্রকাশ করে দেখাতে হয়।
শিশুর প্রতিভা বিকাশে সহশিক্ষার অবদান: প্রতিটি শিশু ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিসত্তা ও স্বাতন্ত্র্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় তাদের সেই বৈচিত্র্যময় প্রতিভা বিকাশ লাভ করে। চিত্তবৃত্তির বিকাশ সাধন এবং আপন আপন সত্তা প্রস্ফূটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহশিক্ষা কার্যক্রমের ভূমিকা অপরিসীম।
সহশিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব: শিশুরা খরস্রোতা নদীর মতই আপন বেগে প্রবাহমান। তাদের বহুমুখী চিন্তাশক্তির পরিচর্যা না করে যদি একমুখী শিক্ষা প্রদান করা হয় তাহলে শিক্ষাচক্র সমাপ্তির পূর্বেই অধিকাংশ শিশু শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়ে । তখন এই জনশক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয় ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম:মা যেমন তার সন্তানদের জন্য রুচিভেদে খাদ্যের আয়োজন করে থাকেন, তেমনি শিক্ষাগ্রহণকে আনন্দঘন করা ও শিক্ষার্থীর বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ সাধনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন : ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা (কোরআন তেলোয়াত,হামদ-নাত, কবিতা আবৃত্তি, গান,নাচ,অভিনয়, বিতর্ক, বিভিন্ন খেলা ইত্যাদি), কাবিং কার্যক্রম, চারু-কারুকাজ, ভাষা ক্লাব, গণিত ক্লাব, হলদে পাখির দল, সাহিত্য চর্চা, স্টুডেন্টস কাউন্সিল, খুদে ডাক্তার টিম সহ আরও অনেক কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিশু এসকল বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে।
সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকের ভূমিকা: বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকগণ শিশুদের সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এ জন্য যেমন তাদের বিষয়ভিত্তিক যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক, তেমনি প্রয়োজন অনুসন্ধিৎসু মন । জ্ঞান ও অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে শিশুর কোমল মনোবৃত্তির প্রতি যত্নবান হলেই সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব ।
সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দের ভূমিকা: শিক্ষার সবচেয়ে তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষকদের অবস্থান। তাঁদের দ্বারা প্রতিটি কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত সেটা মনিটরিং করে থাকেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত মনিটরিং করেন সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার এর সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তিনি মনিটরিং শেষে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পরিশেষে বলা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সফলভাবে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলে শিশুরা সমৃদ্ধ হবে এবং ঝরে পড়া রোধ হবে । এই সকল শিশুরা উচ্চশিক্ষা স্তরেও নিজ নিজ প্রতিভার বিকাশ সাধনে তৎপর থাকবে । এই অর্জনের ফলে তারা সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে এবং দেশ ও দশের জন্য বয়ে আনবে মর্যাদা ও কল্যাণ।
লেখক:
মোঃ সোহাগ আলম
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার
আশাশুনি, সাতক্ষীরা।