গাজা কেনার টাকা যোগাড় করতে ছিনতাইয়ে বাধা সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

রঘুনাথ খাঁ ঃ মাদকের টাকা যোগাড় করতে মাদক সেবী পার্টনার এর মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে বন্ধুর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কানের সোনার দুল ছিনতাই করা হয়েছে। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় দুই হাত ও দুই হাত বেঁধে ওই ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করতে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আগরদাঁড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষক লুৎফর রহমানের পরিত্যক্ত বাড়ির সামনের পুকুর থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একই গ্রামের রেজোয়ান কবীর জনি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গ্রেপ্তারকৃত রেজোয়ান কবীর জনি (২২) আশাশুনি উপজেলার আগরদাঁড়ি গ্রামের মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে।
নিহতেরন নাম নুসরত জাহান রাহী ( সাড়ে ৮ বছর)। সে আশাশুনি উপজেলার আগরদাঁড়ি গ্রামের ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম রুবেল এর মেয়ে ও আগরদাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।

স্থানীয় আব্দুর রউফ ও আব্দুর রহমান সরদার জানান, ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম রুবেল ও প্রতিবেশী রেজোয়ান কবীর জনি একই সাথে গাজা সেবন করতো। পারিবারিকভাবে নেশার টাকা যোগাড় করতে না পেরে রবিউলের স্ত্রী সাবিনার কাছে মাঝে মাঝে টাকা চাইতো।
রবিউল ইসলাম রুবেল এর স্ত্রী সাবিনা খাতুৃন জানান, শনিবার সকালে জনি তার কাছে ৫০০ টাকা ধার চাইতে আসে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার মেয়ে নুসরত জাহান রাহীকে শনিবার দুপুরে পার্শ্ববর্তা প্রভাত কুমার বসুর মেয়ে সহপাঠি মিতা বসুর সাথে খেলা করার সময় ডেকে নিয়ে কলেজ শিক্ষক লুৎফর রহমানের নির্জন হলুদ খেতে নিয়ে যায় রেজোয়ান কবীর জনি। সেখানে কানের সোনার দুল ছিড়ে নিলে রাহী চিৎকার শুরু করে। একপর্যায়ে রাহীর পরিহিত সোয়েটার ছিড়ে দুই হাত ও দুই পা বেঁধে ফেলার পর জনি তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গুম করতে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে স্থানীয় সোলায়মান আজিজের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন শনিবার বিকেল লুৎফর রহমানের পুকুরে নুসরত জাহান রাহীর ভাসমান লাশ দেখতে পান। বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ রাহীর লাশ দেখতে পায়। সন্ধ্যায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একই গ্রামের মুদি দোকানী আব্দুস সালামের দোকানের সামনে থেকে জনিকে আটক করে।
আগরদাঁড়ি গ্রামের শম্পা বসু জানান, তার মেয়ে মিতা বসুর সঙ্গে একই শ্রেণীতে পড়তো রাহী। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজ বাড়ির সামনে রাস্তায় রাহী ও মিতা খেলা করছিল। ভাত খাওয়ানোর জন্য মিতাকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় জনি রাস্তা থেকে রাহীকে ডেকে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আগরদাঁড়ি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সরদার জানান, তার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি অফিসের লিফটম্যান হিসেবে কাজ করতো। সেখনে গত ২৮ রোজায় ফরিদপুরের ভাঙা এলাকার এক দাখিল পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করে। সম্প্রতি সে সস্ত্রীক বাড়িতে চলে আসে। শনিবার জার্সি গরুকে বীজ দেওয়ার জন্য তিনি, ছেলে জনি, পুত্রবধু তানজিলাসহ কয়েকজন লুৎফরের পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তারা জনিকে রেখে বাড়ি চলে আসেন। পরে জানতে পারেন যে জনি প্রতিবেশী রবিউলের মেয়ে রাহীর কানের দুল ছিনতাই করতে বাধা দেওয়ায় তাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ফয়সাল আহম্মেদ জানান, নিহতের বাবা রবিউল ইসলাম রুবেল বাদি হয়ে রবিবার কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা(৪নং) দায়ের করেছেন। নিহত নূসরত জানান রাহীর লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে রবিবার বিকেলে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেজাউল কবীর জনি নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ি নিহতের খোয়া যাওয়া কানের এক জোড়া সোনার দুল উদ্ধার করা হয়েছে

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)