মানহানি মামলায় দেড় কোটি ডলার পাচ্ছেন ট্রাম্প

আন্তজার্তিক ডেস্ক: নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়ের করা মানহানির মামলা মীমাংসা করতে ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডলার পরিশোধে সম্মত হয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। প্রতিষ্ঠানটির একজন জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপকের ভুল মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই মামলা দায়ের করা হয়।রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ব্রিটিশসংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এবিসি নিউজ মানহানির মামলা নিষ্পত্তি করতে দেড় কোটি ডলার পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালের ১০ মার্চ, এবিসি নিউজের সঞ্চালক জর্জ স্টেফানোপলস একটি সাক্ষাৎকারে বারবার দাবি করেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ধর্ষণের জন্য দায়ী’ বলে রায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে তিনি এক কংগ্রেসওম্যানকে প্রশ্ন করছিলেন, কেন তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করেন।গত বছর এক দেওয়ানি মামলায়, জুরি বলেছিল যে ট্রাম্প ‘যৌন হয়রানির’ জন্য দায়ী করা হয়েছিল কিন্তু ধর্ষণের জন্য দায়ী নন। কারণ নিউ ইয়র্ক আইনে যৌন নির্যাতনের আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে।

শনিবারের এই মীমাংসার অংশ হিসাবে এবিসি একটি বিবৃতি প্রকাশ করবে, যেখানে স্টেফানোপোলাসের মন্তব্যের জন্য ‘অনুতাপ’ প্রকাশ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম রিপোর্ট করেছে ফক্স নিউজ ডিজিটাল।সমঝোতা অনুযায়ী, এবিসি নিউজ একটি ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফাউন্ডেশন এবং মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার দেবে, যা মামলার বাদী ট্রাম্প বা তার পক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেমনটা আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা করেছিলেন। এছাড়া আও এক মিলিয়ন ডলার দেবে ট্রাম্পের আইনগত খরচের জন্য।

মীমাংসার শর্তানুসারে, এবিসি চলতি বছরের ১০ মার্চ অনলাইনে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনের নিচে একটি এডিটরের নোট যোগ করবে।এতে লেখা থাকবে: ‘এবিসি নিউজ এবং জর্জ স্টেফানোপোলাস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ১০ মার্চ ২০২৪ এবিসি’র ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে জর্জ স্টেফানোপোলাসের সাথে প্রতিনিধি ন্যান্সি ম্যাসের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত।

এবিসি নিউজের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোম্পানি খুশি যে উভয়পক্ষ আদালতে দাখিল করা শর্ত অনুযায়ী মামলা মিটমাট করেছে।২০২৩ সালে নিউইয়র্কের এক দেওয়ানি আদালত অভিযোগ তুলেছিল যে, ট্রাম্প ১৯৯৬ সালে একটি দোকানের ড্রেসিং রুমে ই. জিন ক্যারলকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। ওই ম্যাগাজিনের কলামিস্টকে মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।বিচারক লুইস ক্যাপলান বলেন, জুরির সিদ্ধান্ত ছিল যে ক্যারল প্রমাণ করতে পারেননি যে ট্রাম্প তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। মূলত নিউইয়র্ক দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে।

বিচারক ক্যাপলান আরও বলেন, সাধারণ ভাষায়, অভিধানে এবং অন্য আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা যেভাবে দেওয়া হয়েছে সেই তুলনায় নিউইয়র্কের আইনে এর সংজ্ঞা ‘অনেক বেশি সংকীর্ণ।’

পৃথক আরেকটি মামলায়, একই বিচারকের অধীনে, জুরি ক্যারলের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্যের জন্য, ট্রাম্পকে ৮৩ দশমিক তিন মিলিয়ন দিতে বলেছিল।

১০ মার্চের ওই টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সম্প্রচারে, স্টেফানোপোলাস দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান ন্যান্সি ম্যাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি কীভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন করতে পারেন।

উপস্থাপন বলেছিলেন, ‘বিচারক এবং দুটি পৃথক জুরি ট্রাম্পকে ধর্ষণের জন্য দায়ী বলেছে।’ যে তথ্য ভুল ছিল। স্টেফানোপোলাসের পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে তার এই কথা অন্তত ১০ বার বলেন।

রায়ের আগে, একজন ফেডারেল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক ট্রাম্প এবং স্টেফানোপোলাসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পরের সপ্তাহে শপথ নিয়ে প্রমাণ দিতে।

ট্রাম্প কমলা হ্যারিসের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে ‘প্রতারণামূলক আচরণ’ করার জন্য বিবিসির মার্কিন সম্প্রচার অংশীদার সিবিএস-এর বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন।

২০২৩ সালে সিএনএনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মানহানি মামলা খারিজ করে দেন এক বিচারক। ওই মামলায় ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, নেটওয়ার্কটি তাকে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছিল।তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। যদিও মামলাগুলো পরে খারিজ হয়ে যায়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)