বুধহাটা ক্লাস্টারের দুরাবস্থাগ্রস্থ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাণের ঝুঁকির মধ্যে ক্লাশ চলছে

জি এম মুজিবুর রহমানঃ আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ক্লাস্টারের ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের করুন দশা ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সমস্যার কারনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাশে বসতে বাধ্য হচ্ছে। বছরের পর বছর নতুন ভবন নির্মান না হওয়ায় অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে
দুশ্চিন্তা ও উৎকন্ঠার মধ্যে থাকেন। ফলে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের ক্লাশের প্রতি স্বাভাবিক মনোনিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোর সংক্ষিপ্ত তথ্য নিম্নে দেওয়া হলো।
১১৬ নং বালিয়াঘাটা বাইনবশত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঃ বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যথাসাধ্য সুন্দর পরিবেশে চলে এসেছে। ১৯৯৯ সালে সরকারি ভাবে নতুন ভবন নির্মান করা হয়। শিক্ষার্থীরা নতুন ভবন পেয়ে বেশ উৎফুল্ল মনে স্কুলে আসতে শুরু করে। ১৫/২০ বছরের মধ্যে ভবনের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ঝুঁকির মধ্যে ক্লাশ চলতে চলতে ২০২৩ সালে ভবনটি অপসারণ করা হয়। কিন্তু নতুন ভবনের কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় একটি টিনসেড ঘরের মধ্যে পার্টিশান দিয়ে ক্লাশ চালাতে বাধ্য হন কমিটি। তাতে ক্লাশ সংকুলান না হওয়ায় গোলপাতার ছাউনি করা আরেকটি ঘর তৈরী করা হয়। স্কুল চত্বর নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে থাকায় মাটি/বালি ভরাট দেওয়া হয়। ফলে স্কুলটি বলতে গেলে মাটির নিচে চলে গেছে ভীতসহ বড় অংশ। ফলে আলো বাতাসের অভাবে সেখানে টিকে থাকা যেন অবাস্তব হয়ে উঠেছে। প্রধান শিক্ষক আঃ হান্নান জানান, এতবার উর্ধতন কর্মকর্তাগণ স্কুল পরিদর্শনে এসে কক্ষের মধ্যে টিকতে না পেরে বাইরে রৌদ্রে দাড়িয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন তানারা বলেছিলেন, স্কুলের ভিতরে ছায়ার থেকে বাইরে রৌদ্রে দাড়ানো আরামদায়ক মনে হচ্ছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যাতয়াতের পথগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারেনা। তাদের আকুল আবেদন, দ্রুত স্কুল ভবন নির্মান করা হোক এবং সাথে সাথে রাস্তা নির্মান ও ল্যাট্রিন-টিউব ওয়েলের সুব্যবস্থা করা হোক।
১২৩ নং হামকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঃ স্থাপিত ১৯৮৬ সাল। ভবন নির্মান ১৯৮৯ সাল। দীর্ঘদিনের পুরনো ভবনটি জীর্নশীর্ণ হয়ে পড়ায় কয়েকবার সংস্কার ও রঙ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেওয়ালে ফাটল, ছাদ খসে পড়া, পিলারে ভাঙ্গনেরর কারনে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক মুক্তি যোষ জানান, ২০২২-২৩ সালে টিনসেড একটি ছোট ক্লাশরুমে ক্লাশ করা হচ্ছে। কিন্তু ভবনের মধ্যে ক্লাস পরিচালনা রীতিমত ভয়াবহ। স্কুল চত্বরে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। স্কুলে যাতয়াত ও খেলাধূলা করা সম্ভব হয়না। প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তা ও পরিবেশ হীনতায় ভুগতে হচ্ছে। তারা অবিলম্বে নতুন ভবন নির্মান, মাঠ ভরাট, প্রাচীর নির্মানসহ সার্বিক উন্নয়ন কাজ করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।২০ নং কুন্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঃ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার মান উন্নয়নে প্রশংসনীয় ছিল। সরকারি নির্মীত ভবন অপসারনের পর ২০০২ সালে নতুন ভবন নির্মান কাজ করা হয় সরকারি ভাবে। বর্তমানে সেই ভবনটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের ছাদ ও দেওয়াল খসে খসে পড়তে থাকে। পুলারে ফাটল ধরে। বাধ্য হয়ে কয়েকবার সংস্কার ও রঙের কাজ করা হয়। কিন্তু স্থায়িত্ব বাড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা। এখন ভবনটি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া ক্লাশ সংকুলান না হওয়ায় টিনসেডের ২ কক্ষ বিশিষ্ট পৃথক একটি ঘর করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শ্রীধর কুমার দাশ জানান, বিদ্যালয় ভবন ব্যবহার ঝুঁকির মধ্যেও ব্যবহার করা হচ্ছে। টয়লেটের একটি অকেজো, প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে। তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু সুনজর কামনা করেন।১১৪ নং আরার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঃ স্থাপিত ১৯৭০ সাল। ভবন নির্মান ১৯৯৫ সাল। ভবনটি ছাদ খসে খসে পড়ছে। দেওয়াল ও পিলারে ফাটল ধরে পড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কয়েকবার সংস্কার কাজ করা হলেও বেশীদিন থাকছেনা। ল্যাট্রিনের একটি নষ্ট। একটি টিনসেড ক্লাশ কক্ষ ৫/৬ বছর আগে করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা বেগম জানান, বিল্ডিং এর অবস্থা খুবই নাজুক। প্রাচীর না থাকায় বখাটেরা স্কুল ছুটির পর ল্যাট্রিনের কাছে ঢুকে নেশা করাসহ নানা উপদ্রব করে থাকে। স্কুলের পিছনে স্কুলের জমিতে ময়লা আবর্জনা ফেলে ও গরুর বিষ্টা রেখে দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চরম সমস্যায় রয়েছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। তাছাড়া স্কুলের সামনে দিয়ে গরু ও মানুষ যাতয়াত করায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মাঠ নিচু থাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকে। প্রাচীর নির্মান, মাঠ ভরাট করা ও নতুন ভবন নির্মান করা খুবই জরুরী উল্লেখ করে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
১৩৪ নং মহাজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঃ স্থাপিত ১৯৯২ সালে। ভবন নির্মান ২০০০ সাল। ভবনটির অবস্থা নাজুক। ছাদ খসে খসে পড়ছে। দেওয়াল ও পিলারে ফাঁটল ধরেছে। অনেকবার সংস্কার কাজ করে ভগ্নদশা ঢাকান চেষ্টা করা হয়েছে। এতে ভবনটি দেখতে ভাল হলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমেনি। এখনো ভবনের অংশ বিশেষ খসে খসে পড়ছে। শিক্ষকরা ঝুঁকি কমাতে দুর্বল অংশ ভেঙ্গে দিচ্ছেন মাঝে মধ্যে। ক্লাশ রুম সংকট কমাতে ক্ষুদ্র মেরামতের অর্থ ১ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ছোট ইটের ঘর নির্মান কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক রাফেজা খাতুন জানান, স্কুল ভবনের দুরাবস্থার পাশাপাশি প্রাচীর না থাকা ও স্কুল চত্বর তথা মাঠ নিচু থাকায় বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত খাকে। স্কুল ভবনের একহাতের মাধ্যে ব্যস্ততম গুনাকরকাটি মহিষাডাঙ্গা সড়ক থাকায় আমরা খুবই ঝুঁকিতে আছি। শিক্ষার্থীরা মনের অজান্তেই রাস্তায় গিয়ে ওঠে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথার উপর বিদ্যমান থাকে। অনেকবার ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তিনি অতিদ্রুত নতুন ভবন নির্মান, প্রাচীর নির্মান, মাঠ ভরাটসহ সার্বিক উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)