নেই নবান্ন উৎসব আমন ধান কাটা শুরু
ডেস্ক রিপোর্ট:বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। এ দেশে যতগুলো উৎসব হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রচলিত নবান্ন উৎসব। একসময় হেমন্তকালের এ উৎসব ছিল সর্বজনীন। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই এ উৎসবের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে নবান্ন উৎসব।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা উৎসব। এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে হেমন্তের আমন ধান কাটা শুরু হলে চারিদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত। কিন্তু বর্তমানে আমন কাটা শুরু হলেও এ উপজেলার গ্রামগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ও সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন।জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকেই ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে নবান্নকে কেন্দ্র করে বাঙালি উৎসবে মেতে ওঠে। অগ্রহায়ণে নবান্ন কিষান-কিষানির জন্য নিয়ে আসে খুশির বার্তা। দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রমে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একবুক উচ্ছ্বাস নিয়ে ঘরে তোলে নতুন ফসল। নবান্ন উৎসব তাদের এসব দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। গ্রাম বাংলায় নতুন এক আবহের সৃষ্টি হয়। নবান্ন উপলক্ষে আগের দিন রাতে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় আতপ চালের গুঁড়া গুলিয়ে আলপনা আঁকা হতো। মুসলিমরা নতুন ধান কেটে বউ, মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের দাওয়াত করে আনতেন। তাদের নিয়েই চলত পিঠা উৎসব। নতুন চাল ঢেঁকি দিয়ে গুঁড়া করে তৈরি করা হতো হরেক রকম পিঠা। ভাপা, চিতই, দুধপুলি, পিঠাপুলি, পায়েস, সেমাই, ক্ষীর, খই, মুড়ি আরো কত কী! শীতের আগমনীতে খেজুর রস দিয়ে তৈরি হতো এসব সুস্বাদু পিঠা। বাড়ির আঙিনায়, স্কুলের মাঠে হতো যাত্রা, নাটক, জারি-সারি, নবান্নের গান-নাচ, বাউল গান, পালাগানের আসর। কোথাও কোথাও গ্রাম্য মেলার দেখা মিলত। নবান্ন ঘিরে মেলায় দেখা যেত নাগরদোলা, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. তাসফির হোসেন জানান, দাদার কাছে নবান্ন উৎসবের কথা শুনেছি। তখন নবান্নে অনেক আনন্দ হতো। এখন আমরা নবান্ন উৎসব দেখি না।নবান্ন উৎসব নিয়ে কৃষক মো. আল আমিন বলেন, ছোট সময় সবাই মিলে পাকা ধান কাটতাম। তখন নতুন চাল দিয়ে পিঠা, পায়েস হতো। আমরা দল বেঁধে সবাই সবার বাসায় খেয়ে বেড়াতাম। কিন্তু এখন আর সেটা দেখা যায় না। নবান্ন উৎসব আর আগের মতো হয় না।অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, হেমন্তের ধান কাটা শুরু হলেই আমাদের মনে ভেসে উঠত নবান্ন উৎসবের আমেজ। কিন্তু বর্তমানে সেটা আর গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না। এখনকার ছেলেমেয়েরা শুধু নামেই জানে নবান্ন উৎসব।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সবকিছুর। বাংলার হাজার বছরের এ সংস্কৃতি যেন দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে হরেক রকম পিঠা তৈরির আমেজ দেখা মেলে না। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে পিঠার ঘ্রাণও পাওয়া যায় না। বাড়ি বাড়ি আত্মীয়দের সমাগম খুব বেশি চোখে পড়ে না। খোলা মাঠ দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও কেউ খেলতে যায় না। আগামী প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ জনজীবনের এসব চিত্র হয়তো একদিন শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে।