সাতক্ষীরায় ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে জব্দ করার চেষ্টা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার
রঘুনাথ খাঁ ঃ স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার নেতৃত্বে এক ব্যক্তির তিন শতক জমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। জোরপূর্বক ঘর বাঁধাতে বাধা দিলে এক স্কুল ছাত্রী ও তার মাকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা ইউনিয়নের বৈচানা গ্রামের ঋষিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটার পর বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।
সরেজমিনে সোমবার সকালে বৈচানা ঋষিপাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে, মৃত নুরুল আমিনের ছেলে আবু সাঈদের দীর্ঘদিনের কেনা ও দখলীয় জমি থেকে কয়েকটি মেহগণি গাছ ও কয়েকটি জিওলি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে কয়েকদিন আগে। এর পাশে জোরপূর্বক ঘরও বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।বৈচানা ঋষিপাড়ার সুনীল দাসের ছেলে কমল দাস, হরিপদ দাসসহ কয়েকজন জানান বৈচানা গ্রামের জলধর ঋষি একমাত্র পুত্র সন্তান বাবুরাম দাসকে রেখে মারা যান। বাবুরাম দাসের পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী কিনু দাসী ওয়ারেশ থাকেন। বাবুরাম দাসের পৈতৃক ৩১ নং বৈচানা মৌজার এসএ ১৪২ নং খতিয়ানের ২২৪ দাগের আট শতক জমির মধ্যে তিন শতক জমি প্রয়াত কোরবান আলী গাজীর ছেলে নুরুল আমিনকে ১৯৯৩ সালের ২০ মে ২৩২৬২/৯৩ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা মূলে নাবালক স্বপন কুমার দাস,অমল কুমার দাস ও দূঃখে দাসের অভিভাবক হিসেবে বাবুরাম দাসের স্ত্রী কিনু দাসী রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে লিখে দেন। নুরুল আমিনের মৃত্যুর পর ওই জমির মালিক হন তার ছেলে আবু সাঈদ, স্ত্রীসহ ১৬ জন ছেলে মেয়ে। পরবর্তীতে ওই জমি ভ‚লবশতঃ ১/১ খতিয়ানে যায়। বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম এক সময়কার ভারতীয় নাগরিক দয়াল ঋষি বৈচানা গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে থাকার সুবাদে তাকে ও বাবরাম দাসের সাথে দ্বৈত ওয়ারেশ উল্লেখ করে চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করে দুইজনকে ওয়ারেশ বানিয়ে এ জমি নিয়ে নতুন করে বিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে।নুরুল আমিনের ছেলে আবু সাঈদ জানান, তাদের জমি ১/১ খতিয়ানে “খ’ তপশীল ভুক্ত হওয়ায় তিনি ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে যেয়ে তিনি জানতে পারেন যে তাদের তিন শতক জমিসহ আট শতক জমি ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর গোবিন্দ দাসের স্ত্রী বুলু দাসীর নামে নামপত্তন করা হয়েছে। বুলু দাসী নিজেকে জলধর ঋষির ওয়ারেশ সেজে সহকারি কমিশনারকে ভ‚ল বুঝাইয়া এ নামপত্তন করিয়াছে। সংরক্ষিত নারী সদস্যের সুপারিশকৃত বাবুরাম দাসকে একমাত্র ওয়ারেশ হিসেবে ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইজরাইল গাজী ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ও ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম সুপারিশকৃত ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী বাবুরাম দাস ও দয়াল দাসকে ওয়ারেশ উল্লেখ করিয়া পৃথক আরো একটি ওয়ারেশকাম সনদ দিয়েছেন। সমস্যার সামধানে ২০২২ সালের পহেলা নভেম্বর তিনি সদর সহকারি কমিশন (ভ‚মি) এর কাছে ১৫০ ধারায় বুলু দাসীর নামপত্তন বাতিলের জন্য মামলা করেন। সদর সহকারি ভ‚মি কমিশনার সুমনা আইরিন দুই বার দু’পক্ষের শুনানী শেষে দুটি ওয়ারেশকামের মধ্যে কোনটি সঠিত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ১৩ জুন ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীকে নির্দেশ দেন। গত পহেলা অক্টোবর ইসরাইল গাজী সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের ৭০৪/২২ নং ওয়ারেশকামটি অর্থাৎ বাবুরাম দাস একমাত্র ওয়ারেশ বলে গত পহেলা অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। আবু সাঈদ আরো জানান, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগি জাকির হোসেন, আব্দুল আজিজ, সামছুর ইসলাম, আলী আশরাফ, রফিকুল , সামাদ ও সাকিবসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র এলাকায় চাঁদাবাজি ও জবরদখলে মেতে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দয়ালের ওয়ারেশ বুলী দাসীর ছেলে প্রদীপ দাস, জামাতা রামপ্রসাদ দাস, শংকর দাস, দেবদাস দাস, মেয়ে কল্পনাকে সাথে নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর বৃহষ্পতিবার সকালে তাদের তিন শতক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে তিনটি ঘর বানাতে থাকে। কেটে ফেলে সাতটি মেহগনি ও চারটি জিওলি গাছ। ঘেরা দিয়ে জমি দখল করতে বাধা দেওয়ার ভাই তরিকুলের স্ত্রী তাহমিনা ও মেয়ে ১০ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী শারমিন সুলতানাকে মারপিট করে। খবর পেয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানর সামছুর রহমান ও বর্তমান চেয়াম্যান ইসরাইল গাজী গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করতে বললে তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হয়।আবু সাঈদ অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ ধামা চাপা দিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইসরাইল চেয়ারম্যানকে সম্মানহানি ও হয়রানি করতে বুলি দাসী ও তার সন্তানদের ব্যবহার করে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানবন্ধন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বুলি দাসীর পক্ষে রামপ্রসাদ দাস বলেন, ওই জমি বুলি দাসীর নামে নামপত্তন থাকলে যতক্ষণ খারিজ না হবে ততক্ষণ ওই জমি তাদের। সে কারণে তারা গত বৃহষ্পতিবার ওই জমি দখল করতে গিয়েছিলেন সাইফুল ভাইদের সহায়তায়।তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইরফুল ইসলামের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।