দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম সংকটে জনজীবন
আব্দুর রহমান:বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জনজীবনে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা অত্যন্ত গভীর ও বহুমাত্রিক। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান নেমে আসছে এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ওপর এর চরম প্রভাব পড়ছে।
স¤প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক অসন্তোষের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ মানুষের আশা ছিল, ক্ষমতার পালাবদলের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে এবং জীবনযাত্রার মান কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দুই মাস পেরিয়ে গেলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনের বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে এবং সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত, যেখানে নূন্যতম খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয়ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন উচ্চমূল্যে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য ডিম-মুরগির মতো প্রোটিনজাতীয় খাদ্য কেনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে টিসিবির ট্রাকে লাইন দিয়ে কম দামে পণ্য কেনার চেষ্টা করতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্লান্তিকর।
বর্তমান বাজার সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সরকারের অদক্ষতা, সিন্ডিকেটের কারসাজি, এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা। অতীতে সরকারের নীতিমালায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, এবং পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বাজার অস্থিতিশীলতায় ভ‚মিকা রেখেছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাজারের অস্থিরতা আরো জটিল হয়ে উঠেছে, যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হওয়ায়, গ্রামীণ কৃষির অবনতি সরাসরি বাজার সংকটে প্রভাব ফেলে। বর্তমানে কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল উৎপাদন কমে গেছে, যার ফলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। গ্রামীণ কৃষকরা পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করতে না পারায় সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষিতে পুনরায় বিনিয়োগ ও কৃষকদের উৎসাহিত করা এখন সময়ের দাবি।
যদিও সরকার স¤প্রতি কিছু পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করতে হবে এবং সরবরাহ চেইনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায়, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে এবং জনমনে অসন্তোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে কেবল বাজার নিয়ন্ত্রণেই নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে তৎপর হয়ে জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।