কলারোয়ায় এবার নতুনরূপে ৩৯ মণ্ডপে আড়ম্বরেই হচ্ছে দুর্গাপূজা

কামরুল হাসান: কলারোয়ায় দুর্গোৎসবের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে আড়ম্বরেই উপজেলার ৩৯ মণ্ডপের সবখানেই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কলারোয়া উপজেলাব্যাপী সকল মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমার অনুপম রূপ দেওয়ার শেষ মুহূর্তের কাজে। রঙ-তুলির বর্ণিল পরশে দেবী দুর্গাকে মোহনীয় সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে। সবখানে প্রতিমা নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে। উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে প্রায় অভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শনিবারের মধ্যে সকল মণ্ডপে রঙের চূড়ান্ত কাজ শেষ হয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯ টার দিকে কলারোয়া পৌরসভাধীন মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়া পূজা মন্ডপে যেয়ে দেখা যায়, এখানে প্রতিমা তৈরির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এই মন্ডপের সভাপতি বাবু বাসুদেব পাল এবং সাধারণ সম্পাদক বাবু পলাশ পাল জানান, এবার তাদের মন্ডপের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন প্রতিমাশিল্পী বাবু প্রহ্লাদ কুমার ও তার দলের ৪জন প্রতিমা শিল্পী। পৌরসভার তুলসীডাঙ্গা ঘোষপাড়া মাতৃমন্দির পূজা মন্ডপে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এ মণ্ডপে দায়িত্বরত দীপক ঘোষ জানান, নজরকাড়া প্রতিমা গড়তে তাঁরা প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে তারা দুর্গাপূজা প্রতিবারের ন্যায় এবারও উদযাপন করতে যাচ্ছেন। এসময় মন্ডপের দায়িত্বশীলরা জানান, তাঁরা উৎসবমুখর পরিবেশে কলারোয়ায় দুর্গাপূজাসহ সকল পূজা নির্বিঘ্নে পালন করে থাকেন। সব ধরনের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির আলো ছড়িয়ে আসছেন তাঁরা। মহালয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার পর থেকে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব এই দুর্গাপূজাকে ঘিরে তাদের ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ। এবারের দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতি, পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কথা হয় উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ রায় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার পালের সাথে। এঁরা সার্বিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ও পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবার উপজেলার সকল মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হতে যাচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি দাবি করে তাঁরা বলেন, তালা-কলারোয়ার সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের উদ্যোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের পূজামন্ডপে নিরাপত্তা-সুরক্ষা বিধানের দায়িত্ব প্রদান করায় আমরা তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাছাড়া, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে প্রশাসনের তদারকি ও সর্বোপরি আপামর মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসায় আনন্দঘন পরিবেশে এবার দুর্গোৎসব হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত ইসলামি দলের নেতারা সবখানে সম্প্রীতির বাণী তুলে ধরছেন। এজন্য তাঁরা উপজেলার সকল ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তাঁরা জানান, উপজেলায় এবার ৩৯ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। এরমধ্যে কলারোয়া পৌরসভা এলাকার ৮টি মণ্ডপ হলো: তুলসীডাঙ্গা ঘোষপাড়া, তুলসীডাঙ্গা গোয়ালঘাটা, মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়া, মুরারীকাটি দক্ষিণ পাড়া, মুরারীকাটি দক্ষিণ হরিসভা, গোপীনাথপুর ঘোষপাড়া. গোপীনাথপুর দক্ষিণ পাড়া ও ঝিকরা হরিতলা পূজামণ্ডপে। জয়নগর ইউনিয়নের ৫ টি মণ্ডপ হলো: খোর্দ্দ-বাঁটরা, জয়নগর মাতৃমন্দির, ধানদিয়া দাসপাড়া, জয়নগর মাঝের পাড়া, দক্ষিণ জয়নগর তরুণ সংঘ পূজামণ্ডপ। জালালাবাদ ইউনিয়নের ২টি মণ্ডপ হলো: কাশিয়াডাঙ্গা ও বৈদ্যপুর দাসপাড়া। কয়লা ইউনিয়নের ২টি মণ্ডপ হলো: কয়লা ঘোষপাড়া ও শ্রীপতিপুর দাস পাড়া। লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের ২ টি মণ্ডপ হলো: লাঙ্গলঝাড়া ও খাসপুর। কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের ২ টি মণ্ডপ হলো আইচপাড়া পালপাড়া ও বাকসা দুর্গা মন্দির। সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের একমাত্র মণ্ডপ হলো: সোনাবাড়িয়া মঠমন্দির। চন্দনপুর ইউনিয়নের ২ টি মণ্ডপ হলো: চন্দনপুর ও নাথপুর। কেরালকাতা ইউনিয়নের ২ টি মণ্ডপ হলো: কেরালকাতা ঠাকুরবাড়ি ও সাতপোতা। হেলাতলা ইউনিয়নের ৩ টি মণ্ডপ হলো: দামোদরকাটি, হেলাতলা ও শুভংকরকাটি মাতৃমন্দির। কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ টি মণ্ডপ হলো: শিবানন্দকাটি, কুশোডাঙ্গা কালিবাড়ি ও কুশোডাঙ্গা সেনগুপ্ত পাড়া। দেয়াড়া ইউনিয়নের ৫ টি মণ্ডপ হলো: দেয়াড়া ঘোষপাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দির. দেয়াড়া ঘোষপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, পাকুড়িয়া, পাটুলিয়া কেন্দ্রীয় সার্বজনীন পূজামণ্ডপ ও পাটুলিয়া সনাতন সার্বজনীন পূজামণ্ডপ। যুগিখালি ইউনিয়নের ২ টি পূজামণ্ডপ হলো: বামনখালি বিনোদতলা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ ও ওফাপুর র্সাবজনীন মায়ের মন্দির।সবমিলিয়ে আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা সাড়ম্বরে উদযাপন করার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সনাতন ধর্মের ভক্ত অনুরাগীরা।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)