ভারতীয় অর্থায়নে পরিচালিত ৮ প্রকল্পের কাজ বন্ধ
অনলাইন ডেস্ক:
ভারতীয় অর্থায়নের পরিচালিত ৮ প্রকল্পের কাজ বন্ধ। ভারতের অর্থায়নে আটটি রেল ও সড়ক প্রকল্পের কাজ গত প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ। তাই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আরো দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতীয় ঠিকাদারি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় এগুলোর কাজ বন্ধ আছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ভারতের অর্থায়নে এসব প্রকল্প দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো চলমান থাকবে।
ঐদিন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও বলেছিলেন, ভারতীয় ঠিকাদাররা দেশে ফিরে প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করবেন। এর পরও অচলাবস্থা কাটছে না।
এই আট প্রকল্পের মধ্যে একটি ঢাকা-টঙ্গী রুটে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণকাজ। এর উদ্দেশ্য ছিল অতিরিক্ত দুটি লাইন নির্মাণের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়ানো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাই বা বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন না করেই ২০১২ সালের নভেম্বরে প্রাথমিকভাবে ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচে প্রকল্পটি হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
২০১৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নকশা ও টেন্ডার জটিলতা, দুর্বল পরিকল্পনা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা শুরু হয়।
সে হিসেবে প্রকল্পের মেয়াদ সংশোধন করে ২০২৭ সালের জুন করা হয়। খরচ প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে তিন হাজার ৩৪২ কোটি টাকা করা হয়। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটি ৩৫ শতাংশ কাজ হলেও এখন নতুন করে প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে।
প্রকল্প পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া বলেন, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ঠিকাদারি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ৫০ জনেরও বেশি ভারতীয় গত ৫ আগস্টের পরে দেশ ছেড়েছেন। তাই প্রকল্পগুলোর কাজ এখন বন্ধ।
এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরো দেরি হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা চেয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনটি এলওসির আওতায় সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার কথা ভারতের। ২০১০ সালে ১৫ প্রকল্পের জন্য ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের প্রথম এলওসি ও ২০১৬ সালে ১২ প্রকল্পের জন্য দুই বিলিয়ন ডলারের এলওসি সই হয়। এ ছাড়াও, ১৫ প্রকল্পের জন্য সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের তৃতীয় ঋণ চুক্তি হয়।
সব মিলিয়ে তিনটি এলওসির আওতায় ৪২টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে ১৪টি প্রায় ৪১০ মিলিয়ন ডলার বা প্রথম দুটি ক্রেডিট চুক্তির আওতায় সামগ্রিক প্রতিশ্রুতির প্রায় ছয় শতাংশ খরচ হয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুসারে, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব উপকরণ ভারত থেকে আনতে হবে। সব ঠিকাদার ও পরামর্শকও ভারত থেকে আনতে হবে। দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই-তিন দিন পর ভারতীয় হাইকমিশনের নির্দেশে ভারতীয় অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িতরা ঢাকা ছাড়েন।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে ‘দ্বিপক্ষীয় প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরো বলেন, কিছু প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে আমরা ঢাকার সঙ্গে কথা বলবো। ভারতীয় এলওসির আওতায় চলমান ছয়টি রেল প্রকল্পের মধ্যে শুধু খুলনা-মোংলা রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। গত বছর তা উদ্বোধন হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শেষ হয়নি।
বাকি পাঁচ প্রকল্পের কাজ আরো দেরি হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
প্রকল্পগুলো হলো, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন, পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া সেকশনে মিটারগেজকে ডুয়েল গেজ লাইনে রূপান্তর, খুলনা-দর্শনা সেকশনে ডাবল লাইন ও বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী বলেন, রেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ভারতীয়রা এখনো ফিরে না আসায় কাজ আটকে আছে।
ঢাকা-টঙ্গী রুটে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন তৈরির কাজে ভারতীয় ঠিকাদাররা না থাকায় গত তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় স্থানীয় কর্মীরা চরম সমস্যায় পড়েছেন। এ ছাড়া, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ভারতীয় এলওসির আওতায় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সংযোগকারী ৫১ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীত করতে খরচ তিন হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করা হয় এবং খরচ বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ ভৌত অবকাঠামোর কাজ হয়েছে,‘উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক আবদুল আউয়াল মোল্লা গণমাধ্যমে বলেন, ভারতীয়রা এখনো ফিরে না আসায় কাজ বন্ধ আছে।’
কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে সম্প্রসারণে নেয়া অপর প্রকল্পটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্পের অপর এক কর্মকর্তা।