আশাশুনিতে ছায়াযুক্ত পতিত জমিতে মসলা ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

আশাশুনি প্রতিনিধি ঃ গাছের ছায়াযুক্ত স্থানে পতিত জমিতে মসলা জাতীয় ফসল আবাদ করে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কৃষকরা সফলতা অর্জন করায় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দিনে দিনে বিভিন্ন গাছের নীচে ছায়াযুক্ত পতিত জমি এখন আর পড়ে থাকবে না বলে ধারনা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আশাশুনি উপজেলার প্রায় সকল এলাকায় ডাঙ্গা জমির একটি বড় অংশে আম, জাম, কাঠাল, লিচু, জামরুল ইত্যাদি ফলজ বৃক্ষের সাথে সাথে বাঁশ গাছের চাষ হয়ে থাকে। এসব গাছের নিচে ছায়াযুক্ত স্থানে কোন প্রকার ফসল চাষাবাদ করা হতো না। এজন্য গাছেন নিচের জমিসমূহ পতিত পড়ে থাকতো। কয়েক বছর ধরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ছায়াযুক্ত পতিত জমিতে মসলা জাতীয় ফসল আবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত লাভবান হওয়ার উপায় সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করার কাজ করে আসছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ছায়াযুক্ত জমিতে মসলা জাতীয় ফসল- বিশেষ করে আদা ও হলুদ চাষে আত্মনিয়োগ করেন। এবং তারা পড়ে থাকা জমিতে চাষাবাদ করে লাভবান হওয়ায় ক্রমে ক্রমে অনেক কৃষক তাদের মত পতিত জমিতে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন।
এমনই একজন সফল চাষী সদর ইউনিয়নের সোদকনা গ্রামের চিত্তরঞ্জন। তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ্ব নিয়ে ৫০০ বস্তা ব্যবহার করে প্রতি বস্তায় প্রয়োজনীয় মাটি ও জৈব সার মিশিয়ে ১০০ গ্রাম করে আদা রোপন করেছেন। ক্ষেত তৈরিসহ সর্বসাকুল্যে তার বস্তা প্রতি খরচ হয়েছে ৫০ টাকা করে। অর্থাৎ ৫০০ বস্তায় চাষাবাদে তার মোট খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তিনি জুলাই মাসে আদা চাষ করেন। ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ফসল উঠবে। তখন প্রতি বস্তায় তার উৎপাদন হতে পারে ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম করে। অর্থাৎ তিনি ৫৫ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকার আদা উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পড়ে থাকা/ফেলে রাখা ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ করে চাষী চিত্তরঞ্জন অসময়ে ৩০/৩৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। শুধু চিত্তরঞ্জন একা নয় তারমত করে আরও ১০০০ বস্তায় অন্য চাষীরা আদা চাষ করেছেন। পাশাপাশি হলুদ চাষেও কৃষকরা এগিয়ে এসেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম এনামুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গাছের নীচে ছায়াযুক্ত জমি অবহেলা ও অজানার কারনে পতিত অবস্থায় থাকতো। এসব জমি কাজে লাগিয়ে অধিক ফসল উৎপাদন ও লাভবান হওয়ার লক্ষ্য মাথায় নিয়ে কৃষি বিভাগ সচেতনতার সাথে কাজ করে আসছে। ফলে কৃষি দপ্তরের সকল কর্মকর্তা নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করে কৃষকদের পাশে থেকেছেন। আমরা ফল বাগানে বস্তায় আদা চাষ, অফলা গাছে মেটে আলু চাষ, ছায়াযুক্ত স্থানে আদা-হলুদ চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে এসেছি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উপরোক্ত চাষাবাদের পাশাপাশি অনেক বাসা বাড়িতেও বস্তায় আদা চাষ করা হচ্ছে। সোদকনা গ্রামের চিত্তরঞ্জনসহ অনেক গ্রামে আধুনিক পদ্ধতিতে ছায়াযুক্ত স্থানে হলুদ ও আদা চাষ করা হচ্ছে। তাদের সফলতা দেখে অবশিষ্ট এলাকাতেও আগামীতে এমনি ভাবে চাষাবাদ শুরু হবে। তখন স্থানীয় চাহিদা পুরন করে আদা ও হলুদ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)