খুলনায় ধর্ম অবমাননা নিয়ে নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্র উৎসব মন্ডল

রঘুনাথ খাঁঃ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নির্যাতিত খুলনার আযম খান কলেজের ছাত্র উৎসব মÐলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে গত ১০ দিনেও কোথাও যোগাযোগ করতে না পারায় উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন স্বজনরা। শুক্রবার দুপুরে বামপন্থী নেতারা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের কুশুলিয়া গ্রামে (চÐিতলায়) গেলে এ উৎকণ্ঠার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
শুক্রবার চÐিতলায় উৎসব মÐলের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে পৈতৃক বাড়িতে যান সাম্যবাদি দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিষ্ণুপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলী, জেলা বাসদের সমন্বায়ক কলেজ শিক্ষক নিত্যানন্দ সরকার, জেলা বাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ইদ্রিস আলী, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, উদীচির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান, বাসদ কর্মী মুকুন্দ মধুসুধনপুর গ্রামের জুলু ।
তলার প্রয়াত হরিপদ মÐলের স্ত্রী রাধা রানী মÐল (৮২) জানান, চার সন্তানের মধ্যে দীনবন্ধু সকলের ছোট। বর্তমানে খুলনা কর্মসংস্থান ব্যাংকে চাকুরি করে সে। পেশাগত কারণে স্ত্রী শম্পা রানী মÐল, বড় ছেলে উৎসব মÐল ও ছোট ছেলে কেজি ওয়ানে পড়াশুনারত স্বচ্ছ মÐলকে নিয়ে খুলনা টুটপাড়া এলাকার ৭/৫ ফায়ার ব্রিগেড রোডে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে দীনবন্ধু। তারা দূরে থাকলেও মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলতো বড় ভাই বিমল ও মেঝ ভাই হারুর সাথে। কথা বলতো তার সাথেও। কিন্তু ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পাকিস্তান টি টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে মহানবী (রাঃস্বাঃ) সম্পর্কে ফেইসবুকে আপত্তিকর পোষ্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে একই এলাকার কয়েকজন ছেলে মাসহ উৎসবকে ধরে নিয়ে যায়। খুলনা পুলিশ কমিশনারের (দক্ষিন) অফিসে পুলিশ, সোনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সামনে কয়েকজন লোক তাকে ধরে নিয়ে দুই চোখ তুলে নেওয়াসহ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে মর্মে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরদিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমকাল ও খুলনার একটি পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশ কমিশনারের বরাত দিয়ে উৎসবের মৃত্যুর বিষয়টি তাদের নজরে আসে। এরপর থেকে তারা আরো উৎকণ্ঠায় ছিলেন। ২০১২ সালে ফতেপুর ও চাকদাহে সহিংসতার বিষয়টি মনে পড়ায় তারা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তাদের বাড়িতে হামলা হতে পারে মর্মে একটি প্রচার তাদের কাছে আসে। এরপর পরই দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দেদারুল ইসলাম, কুশুলিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাবলুর রহমান, বিএনপি নেতা শেখ এবাদুল ইসলাম ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কাজী ডাবøু তাদের পাশে অবস্থান নেন। তবে গত ১০ দিনেও উৎসব ও তার বাবা মায়ের সাথে দেখা করা তো দূরের কথা, ফোনে একবার যোগাযোগ না করতে পেরে তিনি যার পর নেই উদ্বিগ্ন।
দীনবন্ধু মÐলের ভাই বিমল মÐল ও হারু মÐল জানান, ভাই দীনবন্ধু পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন খুলনায় অবস্থান করে থাকে। সে কারণে বাড়িতে আসেও কম। তাদের এখানে কোন ঘরবাড়ি নেই। তুবও মাসহ তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি ছিল না ভাইয়ের। ৪ সেপ্টেম্বরের ফেইসবুকে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার পর নির্যাতন এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তার অফিসের বাইরে উল্লাসিত জনতার পরবর্তী একটি ভিডিও ফেইসবুকে দেখে তারা হতাশ হন। পরবর্তীতে পত্রিকায় উৎসবের মৃত্যুর খবর ছাপা হলেও দীনবন্ধু ও তার পরিবারের কোন সদস্যদের সাথে তারা যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এ ছাড়া মহানবীকে কটুক্তির অভিযোগে খুলনা শেরে বাংলা রোডের হাজী আব্দুল কাদের মিঞার ছেলে মোঃ নাসিরউদ্দিন সাইবার ক্রাইম আইনে উৎসবের নামে গত ৫ সেপ্টেম্বর খুলনা সদর থানায় একটি মামলা করেছেন মর্মে জেনেছেন। একপর্যায়ে ১০ সেপ্টেম্বর ফেইসবুকে হিন্দুমহাজোট নেতা অ্যাড. গোবিন্দ প্রামানিকের সাথে ভাইপো উৎসব মÐলের হাসপাতালে শুয়ে থাকার স্থির চিত্র ছাড়াও গোবিন্দ প্রামানিকের সঙ্গে তার ভাই ও ভাইয়ের হাসপতালে দাঁড়ানো অবস্থায় একটি ছবি তারা দেখতে পান। উৎসব যে বেঁচে আছে তা প্রমান করতে এই ছবিটি দেওয়া হয়েছে বলে তারা মনে করেন। কিন্তু তারা কেন ভাই বা ভাইয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ওই ছবিটি যশোর সম্মিলত সেনা হাসপাতাল থেকে তোলা মর্মে তারা লোকমুখে জেনেছেন। এরপর একটি বারের জন্য তারা উৎসবের পরিবারের সাথে কথা বলতে চান। এজন্য তারা যশোর সেনা ক্যাম্পের জেওসির কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে হিন্দু মহাজোটের মহাসচীব অ্যাড. গোবিন্দ প্রামানিক শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, তিনি যশোর সম্মিলিত সেনা হাসপাতালে যেয়ে উৎসব মÐলকে দেখে এসেছেন। কথা বলেছেন তার বাবা ও মায়ের সাথে। তার অবস্থার ক্রমশঃ উন্নতি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)