ইউনূস–মোদি বৈঠকের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি দিল্লি
অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তবে নয়াদিল্লি এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। চলতি মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এ বৈঠক আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত- এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে গত শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নিয়ে করা মন্তব্যের সমালোচনা করেন। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ইঙ্গিত দেন, বাংলাদেশ তার (শেখ হাসিনা) প্রত্যর্পণ চাইতে পারে এবং বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সব দল ‘ইসলামপন্থী’— এই বয়ান থেকে ভারতের সরে আসা উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাকে (শেখ হাসিনা) রাখতে চায়, তাহলে শর্ত হতে পারে যে তাকে চুপ থাকতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না। এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো নয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য নিয়ে নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সূত্রগুলো জানিয়েছে, তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ঐ সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলোকে ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেদিনই সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে ভারতে যান তিনি। শেখ হাসিনা তখন থেকে ভারতে আছেন। এ অবস্থায় তিনি আর ভারতে থাকতে পারবেন কি না এবং তার সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার প্রত্যর্পণের জন্য যে কোনো সম্ভাব্য বাংলাদেশি অনুরোধের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে, এটিকে একটি অনুমানমূলক বিষয় হিসাবে বর্ণনা করেছে।
হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেয়া ড. ইউনূস ১৬ আগস্ট ফোনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময় মোদি ইউনূসকে আগের সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশ সব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেবে। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবেদন প্রকাশ করাকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে বর্ণনা করেছেন ইউনূস।
তাদের ফোনালাপের সময় দুই নেতা জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস