সাতক্ষীরায় পলাশপোলে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে বাড়ির ফটক নির্মাণ
রঘুনাথ খাঁ ঃ জনসাধারনের চলাচলের রাস্তা দখল করে বাড়ির ফটক বানানো ও আদালতের আদেশ না মানার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলে নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে প্রশাসনিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রাচীর নিজেরাই ভেঙে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়ির গ্রীল ভেঙে নগদ টাকা, মটর সাইকেল ও সোনার গহনা লুট করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের আব্দুল করিমের ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের ২২ মার্চ ২৬২১/২২ নং দলিল মূলে তিনি দেড় শতক পুকুরের জমি কেনেন পলাশপোলের ময়েন আলীর ছেলে আব্দুর করিমের কাছ থেকে। ওই জমি বর্তমানে তার নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। হয়েছে প্রিন্ট পড়চা, দিয়েছেন খাজনা। পার্শ্ববর্তী তিন শতক জমি ২০০০ সালের ২১ মার্চ মাহাবুবর রহমান খান চৌধুরী ২৪৬৭/২০০০ নং দলিল মূলে বিক্রি করেন পলাশপোলের আব্দুল করিমের কাছে। ৪১৫ ডিপি খতিয়ানে তিন শতক জমি সাফিয়া চৌধুরীর নামে মাঠ পড়চা ও প্রিন্ট পড়চা থাকলেও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ওই জমি মাহাবুবর রহমান খান চৌধুরীর উল্লেখ করে ওই একই জমি ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ৩৬৮/১৯ নং দলিল মূলে কেনেন শফিকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম। এরপরপরই জনসাধারণের চলাচলের রাস্তার উপর গেট বানিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় নাজমা খাতুন।
এ রাস্তা বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে তিনি, নাজমা বেগম, বিলকিস বেগম সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন ৩৫৮/২৩, ৩৫১/২৩ ও ৩৯৯/২৩ মামলা করেন। বিচারের সুবিধার্থে ওই তিনটি মামলা পিটিশন ১২৪৬/২৩ মামলায় রুপান্তরিত হয়।
২০২৩ সালের ৩১ মে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্্েরট এক আদেশে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন যে, নাজমা বেগমের যথাযথ কাগজ না থাকলে প্রাচীর ভেঙে ফেলে রাস্তা উন্মুক্ত করতে হবে। পরবর্তী ১৫ জুন এক আদেশে শুনানী না হওয়া পর্যন্ত ওই রাস্তা উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপরও নাজমা বেগম প্রভাব খাটিয়ে রাস্তার উপর নির্মাণ কাজ চলমান রাখার চেষ্টা করেন। বেগতিক বুঝে নাজমা বেগম ২০২৩ সালের পহেলা আগষ্ট সদর সহকারি জজ আদালতে ৪১৪/২৩ নং মামলা করে আদালতে নিষেধাজ্ঞা চান। মামলায় রবিউল ইসলাম ও ফতেমাসহ ৫জনকে বিবাদী করা হয়। গত ২২ আগষ্ট বিরোধপূর্ণ জমিতে উভয়পক্ষকে নির্মাণ কাজ সংক্রান্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। আদেশ গোপন রেখে নাজমা বেগম নির্মাণ কাজ শুরু করলে ২৫ আগষ্ট বিবাদী রবিউল ইসলাম আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানালে সদর সহকারি জজ প্রবীর কুমার দাস বিরোধপূর্ণ জমির উপর স্থিতাবস্তা জারি করে উভয়পক্ষকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বর্তমানে প্রশাসনিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে গত ২৮ আগষ্ট নাজমা বেগম তার নির্মাণাধীন প্রাচীর ভেঙে প্রতিপক্ষ রবিউলের বাড়িতে হামলা চালায়। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাজমার ভাই রেজাউল, দেবর সাইফুল, সাঈদুল, ছেলে রাতুল তার বাড়ির গেট ভেঙে স্ত্রী খাদিজার গলায় দা ধরে ছয় বছরের মেয়ে রাকিবা সুলতানাকে মারপিট করে গলায় থাকা বার আনা ওজনের সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। শোকেজ ভেঙে দুই লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, জারা ১১০ সিসি মটর সাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরায় এসব লুটপাট ও ভাংচুরের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। রাতেই থানায় ও সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আনে নাজমা বেগম। সেনা কর্মকর্তা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার পরামর্শ দিলেও উপপরিদর্শক মফিজ নাজমাকে সতর্ক করেন।
রবিউল ইসলাম আরো জানান,ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে তিনি ২৯ আগষ্ট থানায় অভিযোগ করেন। উপপরিদর্শক মফিজ গত ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর নাজমা বেগমকে থানায় ডাকলেও সাড়া দেননি নাজমা। বর্তমান পরিস্থিতিতে নাজমা, তার দেবর, ছেলে ও ভাইসহ একটি গোষ্ঠি তাকে হুমকি ধামকি অব্যহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে নাজমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তবে সদর থানার উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম বলেন,স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না করে নেওয়ায় বা পুলিশের ডাকে সাড়া না নেওয়ায় বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার ব্যাপারে ওসি স্যার রবিউলকে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় ডেকেছেন।