সাতক্ষীরার সাবেক সাংসদ মীর মাস্তাক আহম্মেদ রবি, সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১৬ জনের নামে আদালতে মামলা
রঘুনাথ খাঁ ঃ ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাটিয়াডাঙা গ্রামের কেরামত গাজীর ছেলে জাকির হোসেনকে মাটিয়াডাঙা বাজারের বিপ্লবের চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ হেফাজতে রেখে নির্যাতনের পর ২ জানুয়ারি দিবাগত রাত তিনটার দিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই আবুল কাশেম বাদি হয়ে তৎকালিন সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বাদির লিখিত অভিযোগটি সিআর মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে (১৫৬(৩)/১৫৭ ধারা তৎসহ গঠিত পুলিশ রেগুলেশন ,বেঙ্গল এর ২৪৫(এ) নং রেগুলেশন অনুযায়ি অগ্রসর হওয়ার জন্য শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।মামলায় অন্যতম আসামীরা হলেন, ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালিন ও বর্তমানে গোয়েন্দা অপরাধ ও তদন্ত শাখার উপপরিদর্শক হাসানুর রহমান, সিপাহী আনোয়ার হোসেন, ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের আব্দুর রশীদ গাজীর ছেলে মনিরুজ্জামান তুহিন, জাহানাবাজ গ্রামের শাহামতের ছেলে আব্দুর রশিদ, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু, মাটিয়াঙাডা গ্রামের আব্দুল মাজেদ এর ছেলে মোক্তার হোসেন, জিয়ালা গ্রামের মান্দার সানার ছেলে আব্দুস সালাম সানা, দহাকুলা গ্রামের মোঃ তায়জেল এর ছেলে মাসুদ রানা ওরফে কোপা মাসুদ, ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, ঘোনা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুর রহমান মোশা ও ধুলিহর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানা।মামলার বিবরনে জানা যায়, সদর উপজেলার মাটিয়াডাঙা গ্রামের কেরামত গাজীর ছেলে জাকির হোসেন ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে মাটিয়াডাঙা বাজারের বিপ্লবের চায়ের দোকানে ক্যারাম বোর্ড খেলছিলেন। সকল আসামীদের পারষ্পরিক সহযোগিতা ও উপস্থিতিতে জাকির হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক হাসানুর রহমান ও সিপাহী আনোয়ার হোসেনসহ ২/৩ জন ওই দোকেনে ঢুকে জাকির হোসেনের দুই হাত পিঠ মোড়া দিয়া বাঁধিয়া দুই হাতে হ্যাÐকাপ লাগান। এরপর সিপাহী আনোয়ার হোসেনের গলায় থাকা মাপলার দিয়ে জাকিরের দুই পা বাঁধা হয়। তাদের কাছে থাকা লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে মারপিট করে জখমের পর মটর সাইকেলে তুলিয়া সাতক্ষীরার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা পুলিশ, গোয়েন্দা অপরাধ ও তদন্ত শাখাসহ বিভিন্ন স্থানে জাকিরের সন্ধান মেলেনি। ২ জানুয়ারি দিবাগত রাত তিনটার দিকে দামারপোতা ওয়াপদা বেড়িবাঁধের নীচে বেতনা নদীর চরে সকল আসামীদের প্রকাশ্য ইন্ধনে ও সহযোগিতায় হাত পা ও চোখ বেঁধে জাকির হোসেনকে দুই রাউÐ গুলি করে হত্যা করা হয়। ৩ জানুয়ারি ভোরে জাকির হোসেনের লাশ সদর থানার ভিতরে ভ্যানের উপর দেকতে পান তারা। বিকেলে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে জাকিরের লাশ সদর থানার পুলিশের উপস্থিতিতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলার বিলম্বের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. কামরুজ্জামান ভুট্টো ছয়জন পুলিশ সদস্যসহ ১৬জনের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি বৃহষ্পতিবার এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।