বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮০ লাখ মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট:টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে দেশের ১১ জেলায়। তবে বৃষ্টি কমে আসায় কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। ফলে আবহাওয়া বিভাগ ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।সরকারের তথ্য বলছে, ভয়াবহ এই বন্যায় ১১ জেলার ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। পরিবারের হিসেবে যা সাড়ে ৯ লাখ। আর সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮ জন। তবে ব্র্যাকের হিসাব বলছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাতে ৪৫ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।বন্যায় উদ্ধারকাজ, ত্রাণ ও চিকিৎসার জন্য প্রশাসন ছাড়াও সেনা ও নৌ বাহিনী কাজ করছে। আর বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ সমাজকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে দেশের ১১ টি জেলা এখন বন্যা প্লাবিত। জেলাগুলো হচ্ছে- কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর কক্সবাজার, সিলেট মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। তাদের হিসাবে বন্যায় জেলাগুলো ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আর জেলাগুলোতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। জেলাগুলোর ৭৭টি উপজেলা ও ৫৮৭টি ইউনিয়ন পানির নিচে চলে গেছে।বন্যা এলাকায় তিন হাজার ৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় তিন লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ২২ হাজার গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আর ৭৭০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এরই মধ্যে এলাকাগুলোতে সাড়ে তিন কোটি টাকার নগদ অর্থ সহায়তাসহ খাদ্য এবং অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সজল কুমার রায় গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, দেশের ৯টি নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি নদীগুলোর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে আছে। শনিবার দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানে ভারী বৃষ্টি হয়নি। ফলে নদ নদীর পানি কমছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি আগামী ১৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি আরো কমবে। তাতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছি।আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, খুলনা, বরিশাল ও নোয়খালী ছাড়া দেশের অন্য এলাকায় বৃষ্টি কমে গেছে। এটা আরো কমবে। আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত অল্প কিছু বৃষ্টি হবে। এরপর আর বৃষ্টি থাকবেনা। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এই কমার ধারা অব্যাহত থাকবে।এবার বন্যায় অতীতের চেয়ে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। বাড়ি ঘর, ফসলের ক্ষেত ভেসে গেছে। ভেসে গেছে গবাদি পশু। ব্র্যাকের হিসাবে এই বন্যায় ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ৪৫ লাখ মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।তারপরও প্রকৃত ক্ষতি এখনই নিরূপণ সম্ভব নয় বলে জানান ব্র্যাকের ডিজাস্টার হিট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট প্রোগ্রামের পরিচালক মো. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করা যাবে। তবে ধারণা করা যায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হবে।তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে দেশের অভ্যন্তরে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আর ফেনী নদীর উজানে হলো ত্রিপুরা। সেখানেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সেখানেও বন্যা হচ্ছে। এই দুই মিলিয়ে এবার বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তবে আমাদের কাছে এর আগাম পূর্বাভাস ছিলো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)