আশাশুনি ও কালিগঞ্জে বেরিয়ে আসছে বহু সহিংসতার ঘটনা

রঘুনাথ খাঁ ঃ গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ফুফাত ভাইয়ের বাড়িতে দু’তরফা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক কলেজ ছাত্রীকে জীবননাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি’র ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী ওরফে আকু’র বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে ভোল পাল্টে এলাকায় লুটপাটে সহযোগিতার করার অভিযোগ উঠেছে।খাজরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য খাজরা বাজার সংলগ্ন দাসপাড়ার বিপ্লব কুমার দাস জানান, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর তার উপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় রাতে বাািড় ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলীরে নেতৃত্বে খাজরা গ্রামের মিজানুর রহমান গাজী, নুরুজ্জামান খাঁ, বাচ্চু সরদার, বিল্লাল সরদার, ফিরোজ সরদার, মঞ্জুরুল ইসলাম, সিরাজুল মোল্লা, এরশাদ গাজী, নজরুল গাজী, হাসান সরদার ও আদম খাঁসহ ৫০/৬০ জন সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দুই দফায় তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনা পরিদন সকালে একই গ্রামের মামতো বোন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার জায়গীরমহল তকিমউদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের ¯œাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী বিভা দাস একই গ্রামের স্থানীয় সাংবাদিকের কাছে ভিডিও সাক্ষাৎকার দেন। এ খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে ইয়াকুব মেম্বর ও তার সহযোগীরা বাড়ির পাশে যেয়ে বিভাকে জীবননাশের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বুধবার বিকেলে বিভা ও তার বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যেয়ে নতুন করে হুমকি দেন ইয়াকুব আলী। এ ঘটনায় বিভাসহ তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।সরেজমিনে বুধবার সকালে খাজরা বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গেলে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৫ আগষ্ট রাতে ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে তার ভাগ্নে বিকাশ দাসের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। তার ঘের লুটপাট শেষে ঘর বেঁধে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। ৬ আগষ্ট প্রকাশ্য দিবালোকে খাজরা গ্রামের সাধন ঘোষের ছেলে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল চালক পঙ্কজ ঘোষের বাড়ি ভাঙচুর শেষে লুট্পাট করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পঙ্কজের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল মটর সাইকেলটি। একই দিনে খাজরা বাজারের প্রদীপ চক্রবর্তীর বাড়ি ও মুদি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। একই দিনে খাজরা বাজারের পাশে সজনী কান্ত রায় এর ছেলে গৌতম রায়, সুব্রত দাসের ছেলে সঞ্জয় দাস, খাজরা ঘোষপাড়ার রাজকৃষ্ট দাসের ঘোষের ছেলে শ্যামাপদ ঘোষ, নারায়ন চন্দ্র ঘোষের ছেলে চন্দ্রজিৎ ঘোষ, ৫ আগষ্ট রাতে আনন্দ ঘোষের ছেলে বিপ্লব ঘোষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি, ধীরেন্দ্র ঘোষের ছেলে বাবলু ঘোষের বাড়ি, নীলাঞ্জন রায় এর ছেলে ব্যবসায়ি দয়াল রায় এর বাড়ি, ৬ আগষ্ট দুপুরে সাত্তার মোল্লার ছেলে শহীদুল মোল্ল্যার বাড়ি, প্রায় একই সময়ে কাশেম আলী সরদারের ছেলে নওয়াব আলী সরদার, দলিলউদ্দিন সরদারের ছেলে মুনসুর সরদার, মালেক সরদারের ছেলে আনিছ সরদার ও আজিজ সরদারে বাড়ি, সোবহান গাজীর ছেলে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল চালক আজিজুল গাজীর বাড়ি ও মটর সাইকেল, ৫ আগষ্ট সাত্তার গাজীর ছেলে শফিকুল গাজীর বাড়ি, ৬ আগষ্ট দুপুরে নূরমান গাজীর ছেলে হাফিজুল গাজীর বাড়ি মোজাম্মেল মোল্লার ছেলে বেল্লাল মোল্লার বাড়ি, একই দিনে খাজরা বাজারের গোয়ালডাঙা এলাকার সুব্রত গোলদারের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট্ করা হয়েছে। ওইসব পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তবে ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী ওরফে আকু জানান, বিভা দাসকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। মেয়েটির চাচা দিবস দাস স্থানীয় এক সাংবাদিককে ভুল তথ্য দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেও সাবেক ইউপি সদস্য বিপ্লব দাসের চাঁদাবাজি ও জবরদখলে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে পাশে থাকতে বলেছেন। তবে গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।তবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলে বিশেষ শাখার কর্মকর্তা ইয়াছিন আলম চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় ও স্থানীয় সোন ক্যাম্পে অীভযোগ করার পরামর্শ দেন।এদিকে কালিগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে জানা গেছে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই নলতা এলাকায় উৎপাত শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আরিজুল ইসলামের নির্দেশে চিংড়িখালির নওয়াব আলীর ছেলে শওকত আলী, শহীদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ওরফে বুল্লা, মহাতাব আলী, একই এলাকার কুতুব মোড়ল, সন্ন্যাসীরচকের আবু তালেব গাজীসহ শতাধিক সন্ত্রাসী গত ৫ আগষ্ট রাতে ইন্দ্রনগরের আবুল হোসেনের নলতা বাজারস্থ তার ৫ তলা ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান আছিয়া মঞ্জিলে হামলা চালায়। লুটপাট শেষে পাঁচতলা ভবনে আগুন দেওয়া হয়। নীচের তলায় থাকা চিংড়ি ও মাছের খাদ্য ছাড়া নয় লঅখ ৮৮ হাজার টাকা লুটপাট করা হয়। লুটপাট করা হয় এক ব্যবসায়ির জন্য রাখা ৫০০ ব্যাগ মাছের খাবার, মোজাইক টাইলস ও কাঠ। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ। পরে ওই সন্ত্রাসীরা তার মাছের ঘের, ঘেরে রাখা একটি মহিষ, একটি গরু, ১০টি ছাগল, ৪৭টা গাড়ল, লুটপাট করা হয়। জীবন বাঁচাতে তাকে আত্মগোপন করতে হয়েছে। বিষয়টি তিনি গত ৯ আগষ্ট সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন।
৬ আগষ্ট মাদকাটি গ্রামের চÐী চরণ মÐলের বাড়ি ও ব্যসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট শেষে দখর করা হয়েছে তাদের ২০ বিঘা জমি। ৭ আগষ্ট বন্দকাটি গ্রামের জয়নাল, আজগার, জলিল. কাশেম, অলিল, খলিল, আরাফাত, মোহন আলআমিন, হাফিজুল , হামজা ও বারীর নেতৃতে ৩০ থেকে ৪০ জন মোহর আলী গাজীর ছেলে আব্দুল খালেকের দুটি মুরগির ফার্ম, দুটি বসতঘর,শৌচাগার ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে তার মাছের ঘের। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হলেও পরিবারের সাত সদস্য যার যার মত আশ্রয় খুঁজে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের আবু তালেব সরদারের বাড়িতে হামলার আশঙ্কায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। একপর্যায়ে স্থানীয় একটি মহলের হুমকিতে তার বাণিজ্যিকভাবে পানি উৎপাদন কারখানাটি রয়েছে হুমকির মুখে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)