ঘরবাড়ি ফেলে ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে প্রেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষক পার্থ চক্রবর্তীর বাড়ি
রঘুনাথ খাঁঃ পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগের ঘটনা অব্যহত রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন ধানদিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক পার্থ চক্রবর্তীর বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও প্রেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করার পর ভারতে চলে না গেলে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারী হয়ে গেছে বাতাস। একাধিক মোবাইল থেকে বিভিন্ন পরিচয়ে চলছে চাঁদাদাবি ও জমি জবরদখলের হুমকি অব্যহত রয়েছে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে ধানদিয়া গ্রামের রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ছেলে এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পার্থ চক্রবর্তীর বিশাল প্রাচীর দেওয়া বাড়িতে যেয়ে দেখা গেছে বাড়ির উঠান থেকে বারান্দা ও ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পোড়া কাপড়, পোড়া মোটর, ভাঙা চাউলের ড্রাম, পায়খানার প্যান, কুড়াল দিয়ে কোপানো ফ্রিজ, ভাঙা আলমারি, ভাঙা দরজা, হাঁড়ি পাতিলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। নতুন করে হামলার ভয়ে দরজা বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। বাড়িতে একই গ্রামের মোজাম সরদারের ছেলে বিএনপি ক্যাডার হিসেবেবে পরিচিত বিল্লাল হোসেন বসে আছেন তাদের হিতাকাঙ্খী হিসেবে।পার্থ চক্রবর্তী জানান, ২৪ বিঘা জমি তার। প্রায় তিন বিঘা জমির উপর বাড়ি। এক প্রতিবন্ধি ছেলেসহ পাঁচজনের সংসার তার। মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে বাথরুমের পাশের প্রাচীর টপকে ভিতরে ঢোকে ধানদিয়া সরদারপাড়ার শাহজাহান সরদারের ছেলে ফিরোজ সরদার ও ভাইপো শামীম সরদার।। তাদের হাতে থাকা হাতুড়ি ও কুড়াল দিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর ভেঙে ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রাচীরের দুটি ফটকের তালা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ভেঙে ফেলা হয়। দরজা খোলার সাথে সাথে সরদারপাড়ার গহর সরদারের ছেলে শাহজাহান সরদার, তার ভাই নজরুল ইসলামসরদারসহ চারজন হাতে দা ও কুড়াল নিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে।একে একে তারা বাড়ির চাউলের ড্রাম, টিভি, ফ্রিজ, দরজা, আলমারি, পায়খানার প্যান, গ্যাসের উনুনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। আলমারি থেকে লুটপাট করা হয় নগদ দেড় লক্ষাধিক টাকাসহ চার ভরি ওজনের সোনার গহনাসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র। ভাঙচুর ও লুপাটে বাধা দেওয়ায় স্ত্রী কাকলী চক্রবর্তীর ডান পায়ে কোপ মারা হয়। এছাড়া তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে ঘরের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ফিরোজ ও শামীমের হাতে থাকা দুটি বোতল থেকে প্রেট্রোল ছড়ানো হয় ঘর বাড়িতে। এরপর জ্বেলে দেওয়া হয় আগুন। আগুনের লেলিহান শিখায় ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এ সময় বাড়ির বাইরে সাত থেকে আট জন সশস্ত্র পাহারায় ছিলে। চিৎকার শুনে একই গ্রামের মোজাম সরদারের ছেলে বিল্লাল হোসেন, মাদার সরদারের ছেলে কেরামত সরদার ও আজিজ সরদারের ছেলে হাফিজুর সরদার ছুঁটে এলে হামলাকারিরা ছুঁটে যায়। যাওয়ার আগে ডাকাতি মামলা তুলে না নিয়ে ঘরবাড়ি ফেলে ভারতে চলে না গেলে নতুন ঘরে ঘরবাড়িতে তালা লাগিয়ে মানুষজনসহ পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। বুধবার সকালে বিল্লাল হোসেনের মাধ্যমে জীবন বাঁচাতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবিসহ মামলা তুলে নিতে বলা হয়েছে।
পার্থ চক্রবর্তী আরো বলেন, এক সময় নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে তার বিদ্যালয় থেকে কাশীপুর খোরদো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বদলী করে দেওয়া সহকারি শিক্ষক কয়েকটি নাশকতার মামলার আসামী তৈলকুপি গ্রামের মোঃ সাঈদুর রহমান বুধবার বিকেলে দলবল নিয়ে তার বাড়িতে হামলা ও লুটপাাট করার হুমকি দিয়েছেন। তার লীজ দেওয়া ৩৮ শতক জমির পাট কেটে নেওয়ার হুমকি দিযেছেন কৃষ্ণনগর গ্রামের জয়নাল সরদারের ছেলে আহম্মদ হোসেন। থানার কোন কার্যক্রম নেই। অভিযোগ করবেন কোথায় সেটা তারা জানেন না।
কাকলী চক্রবর্তী তার পায়ের আঘাত দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, জীবন ভিক্ষা চেয়েছি। তার পরেও হামলাকারিরা বলেছে, “তোদের মা শেখ হাসিনা ভারতে চলে গেছে। তোরা ভালোয় ভালোয় ঘরবাড়ি ফেলে ভারতে চলে না গেলে ঘরের দরজায় বাইর দিক থেকে তালা মেরে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলে দেবো।” এ সময় কিভাবে পার্থ চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলা হয়েছে তার বর্ণনা দেন বেল্লাল সরদার। মোটা অংকের টাকা ও মামলা তুলে নিলে পার্থ চক্রবর্তীর পরিবার শাহজাহানের হাত থেকে রেহাই পাবে বলে জানান বেল্লাল।
একান্ত সাক্ষাৎকারে পার্থ চক্রবর্তী বলেন, ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাতে তার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংগঠিত হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে পাটকেলঘাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সর্বশেষ তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আব্দুল মতিন ধানদিয়া সরদারপাড়ার গহর সরদারের ছেলে শাহজাহান সরদার, শেখ ফজলুর রহমানের ছেলে চৌগাছা গ্রামের আরিজুল ইসলাম ও চোমরখালি গ্রামের র মোড়লের চেলে জালাল মোড়ল এর নাম উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই মামলাটির(সেশন- ৬১/১৭) সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক সাক্ষী শেষে তদন্তকারি কর্মকর্তার সাক্ষ্য দানের জন্য দিন ধার্য আছে। সাজা হয়ে যেতে পারে আসামী শাহজাহান সরদার এমন আশঙ্কা করছিলেন। তাই হঠাৎ করে সরকার পরিবর্তণ হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে তার বাড়িতে এ হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতা চালানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে স্থানীয়রা জানান, শাহজাহান সরদারের সুনাম নেই। তার পায়ে গুলিও হয় এক সময়। তাই থানায় পুলিশ না থাকায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা তার ভয়ে পার্থ চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন।এ ব্যাপারে শাহজাহান সরদার ও শিক্ষক সাঈদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ০১৭৬৯-৫৫২৫৩৪ এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও ম্যাসেজ দেওয়া হয়।