কারাগারের ফটক ভেঙে আসামীদের বের করে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা, পুলিশ সুপারেরের বাসভবন, সদর থানা ও ট্রাফিক অফিসে হামলা

রঘুনাথ খাঁ, ঃ সোমবার বিকেল থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, একজন সংসদের বাড়ি, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করেছে। সহিংসতায় নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিকেল ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা কারাফটক ভেঙে সকল আসামীদের বের করে দিয়ে যায়। এ ছাড়া ধমীয় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাতের আঁধারে সহিংসতা আরো বাড়তে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সোমবার দুপুর দুটোর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারিরা শহরের খুলনা রোডের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনের ফটক ভাঙচুরে করে। পরে তারা সদর থানার ফটক ও ট্রাফিক পুলিশ অফিসে হামলা চালায়। থানা ফটকের সামনে ও ট্রাফিক পুলিশ অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরপরই আন্দোলনকারিরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলাশপোলের বীর মুক্তিযোদ্ধা অথ্যক্ষ আবু আহম্মেদ এর বাড়ি, সুলতানপুরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ শুভ্র, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের সিটি কলেজের সামনের বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের শ্রমিকলীগের অফিস, পাকাপুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পুরাতন অফিস, বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলের বাড়ি, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যুবলীগ নেতা শাহাজাদার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তালা উপজেলার খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলুর বাড়ি, তালা যুবলীগের সভাপতি মীর জাকির হোসেনের অফিস, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কালিগঞ্জের নারায়নপুরে আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদের নিয়ন্ত্রণাধীন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ, নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আশাশুনির প্রতাপনগরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়ি, মানিকখালি ব্রীজের টোল আদায়ের ঘর, শ্যামনগরের রমজাননগরের ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি বরেন্দ্র বৈদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নূরনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে। ভাঙচুর করা হয় পুরাতন সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ অফিস, পোষ্ট অফিস মোড়ের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জজ কোর্টের পাশে অ্যাড. তামিম আহম্মেদ সোহাগের বাড়ি, কাটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সদস্য সচীব হাসান ইমাম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ি, আবাদেরহাটের বুলবুলের ফলের দোকান, শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের আবাদেরহাটের অফিস, আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইন্দিরা গ্রামের হাবিবুর রহমান হবির বাড়ি, কুচপুকুরের নজরুলের বাড়ি,ঝাউডাঙা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান আলী বিশ্বাসের বাড়ি, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সনৎ ঘোষের বাড়ি, আশাশুনির বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ সানার বাড়ি, আশাশুনি সদরের রণজিৎ কুমার বৈদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শ্যামনগরের ভেটখালি বাজারের কৃষ্ণপদ রায় এর চায়ের দোকান, তার ছেলে মিলন রায় এর মোটর সাইকেল, আল ফারুক ও তার ছেলে লিঙ্কন এর মাইক্রোবাস ও মটর সাইকেল, কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনিছুজ্জামান খোকন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি পাটকেলঘাটা বাজারের সার, কীটনাশ ও বীজ ব্যবসায়ি বিশ্বজিৎ সাধু, রুপায়ন হাজরার মোবাইল দোকান, সাতক্ষীরা- ১ তালা- কলারোয়া আসানের সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপির সাবেক চেয়াম্যান নাকনা গ্রামের জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলা করা হলে তিনি ছাঁদ থেকে গুলি ছুঁড়লে আন্দোলনকারিরা কুড়িকাহনিয়া গ্রামের হারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেস আনাস বিল্লাহ, কল্যানপুর গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে আদম আলী ও কোলা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আলম নিহত হন। গুলি শেষ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে জাকির হোসেন ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুপিয়ে, জাকির হোসেনের এক ভাইপো, এক ভাগ্নে ছাড়াও তার দাই দেহরক্ষীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বিকেল ৬টার দিকে জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ও সেলের তালা ভেঙে আসামীদের বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর থানার সামনে পুলিশ ও ক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। শোনা যাচ্ছিল গুলির শব্দ।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর, কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিষ্ণুপদ পাল, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান ছিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)