বুধহাটায় নদী খননের নামে অপরিকল্পিত বাঁধে এলাকা জলমগ্ন

জি এম মুজিবুর রহমান ঃ আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বিল, মাঠ, ঘরবাড়ি, মাছের ঘের নদী খননের নামে অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের বেড়াজালে আটকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মৎস্য চাষের ঘের, ঘরবাড়ি, পুকুর, শস্যক্ষেত পানিতে ভাসতে শুরু করেছে। অপরিকল্পিত ভাবে নদী খননের নামে স্লুইস গেটের ব্যবহার অকার্যকর করে দেওয়ায় অর্থাৎ নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পয়ঃ নিস্কাসন ব্যবস্থা রুদ্ধ করে দেওয়ায় এলাকা বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে। ইতিমধ্যে বুধহাটা, শ্বেতপুর, নওয়াপাড়া  মহেশ্বরকাটি, বেউলা, চিলেডাঙ্গা, পাইথালী, কুন্দুড়িয়া, নৈকাটি, ঝাটিরকাটা, চাপড়াসহ আশপাশের খাল বিল, বেড়, পুকুর জলমগ্ন হয়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়ি নিমগ্ন হয়েছে। অসংখ্য মাছের ঘের, উচু স্থানের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যাতয়াতের পথ, গোয়াল ঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা পানি ছু্ঁইছুঁই করছে। বুধহাটা ইউনিয়নের আয়তন ৩৩.৫৩ বর্গমাইল। ২৪টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নের প্রধান ফসল ধান, মাছ ও সবজি। প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস ইউনিয়নটিতে। স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা না নিলে হাজার হাজার বিঘা জমির আমন ফসলসহ ডাঙ্গার ফসল পানিতে তলিয়ে শেষ হয়ে যাবে। ঘরবাড়িতে ধ্বস লাগবে। রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়ে মানুষের জীবনে নেমে আসবে চরম দুর্গতি। ইউনিয়নের বিল সমুহের জলাবদ্ধতা দূরের পদক্ষেপ না নিলে এবছর ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব এবং মাছ চাষের ঘের একাকার হয়ে মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা ও বসতবাড়িসহ সকল স্থাপনা জলমগ্ন হয়ে মানুষের জীবনে বয়ে আসবে সীমাহীন দুর্গতি। এলাকার সমস্যার কথা জানতে ও প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে খোজ খবর নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এসও জহুরুল হক পাউবোর কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু গত ১৬ জুলাই নদী খনন কাজ, স্লুইস গেটের অবস্থা ও ঝুঁকিতে থাকা বিল সমুহ সরেজমিন পরিদর্শন ও এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তারা উত্তর চাপড়ার কাছে নদীতে দেওয়া বাঁধের অবস্থা দেখেন। পরিদর্শনকালে বাঁধের এক পাশে পাইপ বসিয়ে পানি নিস্কাশনের বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেন। পরিদর্শন শেষে এসও জহুরুল হক এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে বাঁধে পাইপ স্থাপনের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে উপস্থিত সকলকে আশ্বস্থ করেন। বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ডাবলু জানান, ইউনিয়নের বুধহাটা, শ্বেতপুর, নওয়াপাড়া, বেউলা, গাজীরমাঠ, পদ্ম বেউলা, চিলেডাঙ্গা, মহেশ্বরকাটি, নারানপুর, ঝাটিরকাটা গ্রাম সম্পর্ণ ভাবে এবং চাপড়া, পাইথালী, কুঁন্দুড়িয়া, হাজীপুরসহ আশপাশের গ্রাম ও বিল সমূহের বৃষ্টির পানি আংশিক ভাবে বুধহাটা ও মহেশ্বরকাটি স্লুইস গেট দিয়ে নিস্কাশন হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর অন্যান্য গ্রাম ও বিল এবং ফিংড়ী ও পার্শবর্তী ইউনিয়নের পানির বড় অংশ এই গেট দিয়ে নিস্কাশিত হয়ে আসছে। ফলে বুধহাটা ইউনিয়নের উত্তরাংশের বিল সমুহ বাইরের পানির চাপে পানির পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় ফসল চাষাবাদ সীমাহীন সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। সম্প্রতি দেখা দিয়েছে আরও একটি প্রতিবন্ধকতা। বেতনা নদী খনন কাজে হাত দেওয়ায় নদীতে নওয়াপাড়া ও চাপড়ায় আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নদী বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে বর্তমানে বুধহাটা ও মহেশ্বরকাটি স্লুইস গেট সম্পর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে ইতিমধ্যে বিল সমুহে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে ঘরবাড়ি, পুকুর ডোবা নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টি আরও কিছুদিন চললে পুরা বিলগুলোতে এবছর ধান চাষ সম্ভব হবেনা। ক্রমান্বয়ে মাছের ঘেরগুলোও পানির চাপে নিমজ্জিত হবে ও মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় মাছ চাষীরা ঘের বন্ধ করবে কিনা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু বলেন, এলাকার কৃষক না বাঁচলে ইউনিয়নবাসী বাঁচবে না। পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বুধহাটা ও মহেশ্বরকাটি স্লুইস গেট বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। বাঁধে পাইপ বসিয়ে গেট চালু করার ব্যাপারে তাদের সাথে কথা হয়েছে। কর্মকর্তারাও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পাইপ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ভাবে ভাবছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে পাউবো কর্মকর্তার এলাকা পরিদর্শনের পর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও পাইপ স্থাপনের ব্যবস্থা না হওয়ায় এবং বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পুকুর, ক্ষেতখামার, ঘরবাড়ি জলমগ্ন হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ২/৫ দিনের মধ্যে পুরো এলাকা নিমজ্জিত হওয়ার শঙ্কা বিরাজ করছে। নদী খনন কাজ এখনো কমপক্ষে ৬ মাস পরে শুরু হবে। বাঁধে পাইপ বসিয়ে পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা না করলে ততদিনে আমন ধান চাষ সম্ভব হবেনা। মাছের ঘের ভেসে যাবে। অসংখ্য ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে ধসে যাবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও মাননীয় সংসদ সদস্য ডাঃ আ ফ ম রুহুল হকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)