কৃমির ওষুধ টগর ফুল, চুলকানিতেও কার্যকর
স্বাস্থ্য ডেস্ক:
আমাদের অতি চেনা একটি ফুল টগর। বাগানের এক কোণে একটি টগরের গাছ সারা বছর প্রায় বিনা যত্নেই ফুল ফুটিয়ে যায়। টগর ঝোপঝাড়বিশিষ্ট চিরহরিৎ গাছ। অন্যান্য নাম – কাঠমল্লিকা, কাঠকরবী, কাঠমালতী, চাদনী, অনন্ত সাগর ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tabernaemontana divaricata (L.) Br.। যা Apocynaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
পৃথিবীতে এই গণের ৪০ টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৪টি প্রজাতি পাওয়া যায়। টগর গর্ভশীর্ষ পুষ্প। বাংলাদেশের বনে-বাদাড়ে টগর এমনিতেই জন্মে ভীষণ কষ্টসহিষ্ণু এই গাছ। টগরের কাণ্ডের ছাল ধূসর। গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে সাদা দুধের মতো কষ ঝরে বলে একে ‘ক্ষীরী বৃক্ষ’ বলা যায়। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে একে দুধফুল বলে ডাকা হয়। এছাড়া এর অন্যান্য প্রচলিত নাম কাঠ মালতী, কাঠমল্লিকা।
টগরের পাতা ৪-৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা ও এক দেড় ইঞ্চি চওড়া হয়। দুই রকমের টগর পাওয়া যায়। একটি টগরের একক পাপড়ি, অন্যটির গুচ্ছ পাপড়ি। এদেরকে ‘বড় টগর’ ও ‘ছোট টগর’ বলা হয়। পাতার আগা ক্রমশ সরু। ফুল দুধ-সাদা। সারা বছর ফুল ফোটে। থোকা টগরের সুন্দর মৃদু গন্ধ হয় কিন্তু একক টগরের গন্ধ নেই। ফুল থেকে ফলও হয়। তার মধ্যে ৩ থেকে ৬ টি বীজ হয়।
বড় টগরের বোঁটা মোটা এবং একক ফুল হয়। পাতাও একটু বড়। ঝাঁকড়া মাথার জন্য টগর গাছ সুন্দর। ডালগুলোও সোজা ওঠে না, বহু শাখাপ্রশাখা নিয়ে ঝোপের মতো বাগানের শোভা বাড়ায়। সুন্দর করে ছেঁটে দিলে চমৎকার ঘন ঝোপ হয়। কলম করে চারা করা যায়, আবার বর্ষাকালে ডাল পুতলেও হয়। টগর সমতল ভূমির গাছ। পর্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখা যায়। টগর গাছের মূল বা শেকড় তেতো ও কটু স্বাদের। টগরের মূল আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ঔষধি ব্যবহার:
১. টগর গাছের মূলের ছাল তুলে শুকিয়ে পাটায় পিষে মিহি করে ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তিনদিন সকালে খালি পেটে খেলে কৃমি ভালো হয়।
২. গায়ে চুলকানি হলে টগর গাছের শেকড় সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. ঘামাচি হলে টগরের কাঠ ঘষে প্রতিদিন চন্দনের মতো গায়ে মাখলে উপকার পাওয়া যায়।
৪. টগরের কাঁচা ডাল চাবালে দাঁত শক্ত হয়, রক্ত পড়া বন্ধ হয় এবং দাঁতের ব্যথা ভালো হয়।
৫. অনেকে বড় হলেও ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলে। এই সমস্যায় কিছুদিন টগর গাছের মূল গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে প্রতিরাতে ২ চামচ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।