বিসিএসে সবচেয়ে বড় প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি হয় তাহসানের মায়ের আমলেই
ডেস্ক নিউজ:
জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী তাহসান খানের মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ২০০২ সালের ৯ মে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরই ২৪তম (২০০২-২০০৩) বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে বড় প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। এমনকি সেই পরীক্ষাও বাতিল করা হয়।
সেই সময়কার জাতীয় সংবাদপত্র বিশ্লেষণ ও ডেইলি বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২০০৩ সালের ৪ মার্চের দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় শিরোনাম করা হয় ‘২৪তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল’। সেই খবরে উল্লেখ করা হয়, ‘২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল (সোমবার) বিকেলে পাবলির সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় আকস্মিকভাবেই এই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশ্য এর আগে গতকাল সকালেই পিএসসি ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করতে না করতেই রহস্যজনকভাবে পুরো পরীক্ষা বাতিলেরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’
২৪তম বিসিএসের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিছু কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে, সেই সময়ে দেশের প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হয়। সারাদেশে সেই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিসিএস প্রশ্নফাঁসে আলোচিত সৈয়দ আবেদ আলী সেই সময়ে ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন।
জানা যায়, সেই সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তাহসান খানের মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম। শুধু তাই নয়, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সমন্বিত ও মুদ্রণসহ সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে পিএসসির প্রতিটি সদস্যই জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে পরীক্ষা বাতিলের দাবি নাকচ করে দেন। এমনকি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায়ও পিএসসি চেয়ারম্যান ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম কোনো তদন্ত কমিটি গঠন থেকেও বিরত থাকেন। পরীক্ষা শুরুর ২ ঘণ্টা পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রটি রমনা এলয় হাতে লেখা প্রশ্নপত্র ও উত্তরের কপি নিয়ে জিডি করতে গিয়েছিলেন; সে সম্পর্কেও তিনি কোনো খোঁজ-খবর নেননি এবং সংশ্লিষ্ট ওসিকেও ডেকে এ ব্যাপারে কোনো সত্যতা যাচাই করেনি।
সেই সময়ে এই ঘটনার পর সংবাদপত্রে প্রশ্ন ফাঁদ সম্পর্কে প্রতিদিন লেখালেখি অব্যাহত থাকায় এবং পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থায় মাধ্যমে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়ায় পর সরকারের শীর্ষ মহল থেকে পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে মত দেওয়া হয়। এরপরই ২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
জানা গেছে, প্রফেসর ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ছিলেন দেশের অন্যতম প্রধান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন’-এর জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত অষ্টম চেয়ারম্যান। ২০০২ সালের ৯ মে তিনি পিএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৭ সালের ৭ মে পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান ও ১৯৬৭ সালে স্নাতক পাশ করেন এবং ১৯৭৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এ বিষয়ে পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী তাহসান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।