মার্তিনেসের জোড়া গোলে তিনে তিন আর্জেন্টিনার
স্পোর্টস ডেস্ক:
গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। গুরুত্বের বিবেচনায় পেরুর বিপক্ষে ম্যাচটা অনেকটা নিয়মরক্ষার বলা যেতে পারে। সে কারণেই কিনা আগের ম্যাচের একাদশ থেকে ৯ জনকে পরিবর্তন করে পেরুর বিপক্ষে খেলতে নামে আলবিসেলেস্তেরা। লিওনেল মেসিও ছিলেন বিশ্রামে।
আর্জেন্টাইন অধিনায়কের অভাব বুঝতে দেননি লওতারো মার্তিনেস-দি মারিয়ারা। ম্যাচে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে পেরুকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েই পরের রাউন্ডে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আর্জেন্টিনার হয়ে জোড়া গোল করেছেন লওতারো মার্তিনেস।
পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনা কতটা দাপুটে ফুটবল খেলেছে, সেটা পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও বোঝা যায়। ম্যাচের প্রায় ৭৫ শতাংশ সময় বলের দখল ছিল আর্জেন্টিনার পায়ে। আক্রমণও যা করার, দি মারিয়া-গারনাচো-মার্তিনেসরাই করেছেন।
নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ম্যাচে আর্জেন্টিনার ডাগ আউটে দাঁড়াতে পারেননি লিওনেল স্কালোনি। পরিবর্তে সহকারী কোচ ওয়াল্টার সামুয়েল সে দায়িত্বটা সামলে নেন।
মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকে দাপট দেখাতে থাকে আর্জেন্টিনা। কিন্তু আর্জেন্টিনার দাপট ফুটে ওঠেনি স্কোরলাইনে। ব্যবধান আরও বড় হতে পারত, কিন্তু পেরুর জমাট রক্ষণ ও গোলকিপার পেদ্রো গ্যালেসির কয়েকটি দারুণ সেভে ২-০ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় আর্জেন্টিনাকে। অবশ্য একটিও পেনাল্টিও মিস করেছে আলবিসেলেস্তেরা।
আজ ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটেই তিনটি কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। তবে সে কর্নারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মার্তিনেসরা। স্রোতের বিপরীতে পেরু প্রথম আক্রমণ করে ম্যাচের ২১ তম মিনিটে। কিন্তু পেরু ডিফেন্ডার কার্লোস জামব্রানোর হেড বাইরে দিয়ে যায়।
এর ৫ মিনিট পরে প্রায় গোল পেয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু লিয়ান্দ্রো পারেদেসের দুর্দান্ত ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দেন প্যারাগুয়ে গোলকিপার। ৩৭ মিনিটে আবারও গোলের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে ওতামেন্দির হেড বাইরে দিয়ে চলে যায়। বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে লো সেলসোর জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন গ্যালেসি।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার বাড়ানো বল বক্সের ভেতরে পেয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করেন মার্তিনেস। এবারের কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই গোল পেলেন ইন্তের মিলান স্ট্রাইকার।
ম্যাচে ফিরতে পেরু অবশ্য আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছিল। ম্যাচের ৫১ মিনিটে পেরুর প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। কিন্তু দ্রুতই আবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। ৪ মিনিট পরেই আরেকটি গোল পেয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। কর্নার থেকে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে পা লাগিয়ে বল জড়িয়েছিলেন তাগলিয়াফিকো। উদযাপনে মাতেন ওয়াল্টার সামুয়েলের শিষ্যরা। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।
৬৬ মিনিটে আরেকদফা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল পেরু। এ যাত্রায়ও আর্জেন্টিনার ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির হন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ৬ মিনিট পর গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন পারেদেস।
ম্যাচের বাকি অংশে টানা আক্রমণ চালাতে থাকে আর্জেন্টিনা। কিন্তু কোনোভাবেই গোলমুখ খুলতে পারছিল না বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এর মধ্যে এনসো ফার্নান্দেসের একটি শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া লওতারো মার্তিনেসের শট আরেকবার ঠেকান পেরু গোলকিপার।
কিন্তু মার্তিনেসকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখতে পারেনি পেরু। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট আগে দ্বিতীয় গোলটি করেন ইন্তের মিলান স্ট্রাইকার।
একটু পরেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল পেরু। কিন্তু সে প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এতে ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আলবিসেলেস্তেরা।
টানা ৩ জয়ে পূর্ণাঙ্গ ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। গ্রুপের অন্য ম্যাচে চিলির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে কানাডা। এতে ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের রানার্স আপ হয়ে শেষ আটের টিকিট পেয়েছে জেসি মার্শের দল।