প্রতিদিন মাউথওয়াশের ব্যবহার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়

স্বাস্হ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:
মাউথ ওয়াশ একজাতীয় রাসায়নিক উপাদানসমৃদ্ধ তরল জীবাণুনাশক। মাউথ ওয়াশে বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল ও ফ্লোরাইড থাকায় ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আপনি কি নিয়মিত মাউথওয়াশ ব্যবহার করেন? দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করে চলেছেন? তা হলে সতর্ক হতেই হবে। কারণ, ‘মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি’ জার্নালে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে গবেষকেরা দাবি করেছেন কয়েকটি নামী ব্র্যান্ডের মাউথওয়াশ নিয়মিত ব্যবহারে মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে।

এই ধরনের মাউথওয়াশের মিন্ট দেওয়া থাকে। কুলকুচি করার পরেই মুখের ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যায়। গবেষকদের দাবি, টানা এমন মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে দাঁত ও মাড়িতে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে। যা পরবর্তী সময়ে ক্যানসারের মতো রোগের কারণ হতে পারে।

দাঁতের সমস্যা নিয়ে ভোগেন কমবেশি সকলেই। দাঁতের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, দাঁত ভালো রাখতে সারাদিনে অন্তত ২ বার ব্রাশ করতেই হবে। কিন্তু তবুও নানা সমস্যার কারণে দাঁত, মাড়ি ইত্যাদি নিয়ে সমস্যা লেগেই থাকে।

কারো কারো ক্ষেত্রে দাঁত একটু বেশিই সমস্যাপ্রবণ হয়। আবার লিভারের সমস্যা বা ফুসফুসের সমস্যায় মুখে দুর্গন্ধ নিয়েও ভুগতে হয় অনেককে। অনেক সময়ে নিয়মিত ব্রাশ করেও এই দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। ফলে জনসমক্ষে অসুবিধায় পড়তে হয়। আর এই সমস্যা এড়ানোর জন্যই অনেকে মাউথওয়াশ বা মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করেন। অনেকে আবার নিয়মিত মাউথওয়াশ দিয়ে কুলচুচি করেন।

মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, মাউথওয়াশ মুখের দুর্গন্ধ সাময়িক ভাবে দূর করতে পারলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে মিন্ট দেওয়া কিছু মাউথওয়াশ প্রতি দিন ব্যবহার করলে মুখে স্ট্রেপটোকক্কাসের মতো ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় ধরায়। খাবারের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়া গলা দিয়ে খাদ্যনালিতে গিয়ে পৌঁছে সেখানে প্রদাহ তৈরি করে। ফলে ধীরে ধীরে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন শুরু হয়ে খাদ্যনালিতে টিউমার তৈরি হতে পারে। গবেষকেদের দাবি, মুখের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়লে তা খাদ্যনালির ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

গবেষকেদের ব্যাখ্যা, মাউথওয়াশে যে উপাদানগুলো থাকে অর্থাৎ জিঙ্ক গ্লুকোনেট, ট্রাইক্লোসান, থায়মল, সেটাইলপ্লিরি়ডিনিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাছাড়া মিন্ট দেওয়া এ সব মাউথওয়াশে ইথানল এবং অ্যালকোহলের ঘনত্ব এতটাই বেশি থাকে যে, রোজ ব্যবহার করলে খাদ্যনালি ও অন্ত্রের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর কিছু লক্ষণও প্রকাশ পায় শরীরে।

আপনি হয়তো দেখলেন, মাউথওয়াশ ব্যবহারের পরে মুখের ভেতরটা জ্বালা জ্বালা করছে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। খাবার খেতে অনিচ্ছা, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট, বুকে অস্বস্তি, অবিরাম কাশি এর লক্ষণ হতে পারে। খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে, মলদ্বারে ব্যথা, রক্তপাত হলে সাবধান হতে হবে।

দাঁতের চিকিৎসকেদের পরামর্শ, মুখে গন্ধ হলে মাউথওয়াশের বদলে টি ট্রি অয়েল, পিপারমেন্ট অয়েল বা লেমন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ধূমপান যত কম করা যায়, ততই ভালো। লবঙ্গ প্রাকৃতিক মাউথওয়াশের কাজ করে। মুখে লবঙ্গ রাখতে পারেন কিছুক্ষণ। আর তা না হলে লবঙ্গ পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। এতে দুর্গন্ধ চলে যায়। প্রতি দিন ব্রাশ করার সময়ে ভালো করে জিভ পরিষ্কার করুন। তাতেও কাজ হবে অনেকটা। একান্তই সমস্যা বাড়লে তখন দাঁতের চিকিৎকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

তথ্যসূত্র-আনন্দবাজার

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)