ইংল্যান্ডের জয় ছিনিয়ে সেমিতে এক পা দক্ষিণ আফ্রিকার
স্পোর্টস ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য চাপের মুখে ভেঙে পড়া এখন যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মঞ্চে জয়ের খুব কাছে গিয়েও তাদের হেরে যাওয়ার উদাহরণ অনেক আছে। কিন্তু চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে অন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে। চাপে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু ব্যর্থতার গ্লানি নয়, বিজয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ছে তারা। বাংলাদেশ ও নেপালের বিপক্ষে গ্রুপে শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছিল এইডেন মারক্রামের দল।
সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যারি ব্রুক ঝড়ে উড়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েও রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। ৭ রানে জিতে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো টুর্নামেন্টে অপরাজেয় দলটি।
শুক্রবার সেন্ট লুসিয়ায় টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের আফসোসে পোড়ায়। উদ্বোধনী জুটিতে রিজা হেনড্রিকসকে নিয়ে ঝড় তোলেন কুইন্টন ডি কক। হেনড্রিকসকে একপ্রান্তে রেখে উইকেটকিপার ব্যাটার রানের গতি বাড়ান। দশম ওভার শেষ হওয়ার এক বল আগে এই জুটি ৮৬ রান করে ভেঙে যায়। হেনড্রিকস ২৫ বলে ১৯ রান করে মঈন আলীর শিকার হন।
এরপর দ্রুত আরও তিন উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। হেনড্রিকসের পর ডি কক ৩৮ বলে চারটি করে চার ও ছয়ে ৬৫ রান করে থামেন। আইনরিখ ক্লাসেন (৮) ও এইডেন মারক্রাম (১) বিদায় নেন দ্রুত।
১১৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর ডেভিড মিলার হাল ধরেন। ট্রিস্টান স্টাবসকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন তিনি। ২৮ বলে ৪৩ রানে থামেন মিলার। তার পরে মার্কো ইয়ানসেনকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেন জোফরা আর্চার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে ১৬৩ রানে আটকে দেয় ইংল্যান্ড। আর্চার তিন উইকেট নিয়ে তাদের সেরা বোলার।
লক্ষ্যে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি ইংল্যান্ডের। যদিও দ্বিতীয় ওভারে ফিল সল্টকে (১১) দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান হেনড্রিকস। ১৫ রানে কাগিসো রাবাদা উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন।
পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪১ রান করে ইংল্যান্ড। জস বাটলার ৯ রানে ক্লাসেনের হাতে জীবন না পেলে এই সময়ে দুই উইকেট হারাতো তারা। সপ্তম ওভারে জনি বেয়ারস্টোকে (১৬) ফিরিয়ে বড় ধাক্কা দেন কেশব মহারাজ। প্রোটিয়া স্পিনার পরের ওভারে বাটলারকে (১৭) ক্লাসেনেরই ক্যাচ বানান। ১১তম ওভারে ইংল্যান্ডকে বিপদে ফেলে বিদায় নেন মঈন আলী।
ম্যাচ তখন দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ১৫তম ওভারে কাগিসো রাবাদার কাছ থেকে ১৮ রান আদায় করে হ্যারি ব্রুক ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। ইংলিশ ব্যাটারের কাছে দুটি চার হজম করে পরের ওভারে আনরিখ নর্কিয়ে দেন ১৩ রান।
ব্রুকের শক্তি যেন ভর করে লিয়াম লিভিংস্টোনের ব্যাটে। ওটনিল বার্টম্যানের ওই ওভারে ফুল টসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে দুটি চার ও একটি ছয় মারেন তিনি। ব্রুকও একটি চার হাঁকান। ১৭তম ওভারে আসে ২১ রান।
লিভিংস্টোন ঝড় থামে ১৮তম ওভারে। রাবাদার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে স্টাবসকে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তিনি। ১৭ বলে লিভিংস্টোন তিন চার ও দুই ছয়ে ৩৩ রান করেন। ৪২ বলে ৭৮ রানের জুটি ভেঙে যায়। মাত্র ৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন রাবাদা।
শেষ দুই ওভারে লাগে ২১ রান। ইয়ানসেন ১৯তম ওভারে সাত রান দিয়ে চাপে ফেলেন ইংলিশদের, ওই ওভারে ফিফটি করেন ব্রুক। শেষ ওভারে লাগে ১৪ রান। ব্রুকের দুর্দান্ত ইনিংস থেমে যায় শেষ ওভারের প্রথম বলে। পেছনে দৌড়ে মারক্রাম দুর্দান্ত ক্যাচে তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান। ৩৭ বলে ৭ চারে ৫৩ রান করেন ব্রুক।
আর্চার সিঙ্গেল নেন দ্বিতীয় বলে। পরের বলে চার মেরে প্রোটিয়াদের ওপর চাপ বাড়ান স্যাম কারান। চতুর্থ বল ডট দেন নর্কিয়ে। দুই বলে প্রয়োজন বেড়ে দাঁড়ায় ৯ রানে। কারান পারেননি। ৬ উইকেটে ১৫৬ রানে ইংল্যান্ডকে থামিয়ে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ নিয়ে সপ্তমবারের দেখায় ইংল্যান্ডকে পঞ্চমবার হারালো তারা।
গ্রুপ ২-এ ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে দক্ষিণ আফ্রিকা। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ড। প্রোটিয়ারা এই পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৩/৬ (ডি কক ৬৫, মিলার ৪৩, রিজা ১৯; আর্চার ৩/৪০, মঈন ১/২৫, রশিদ ১/২০)।
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৬/৬ (ব্রুক ৫৩, লিভিংস্টোন ৩৩, বাটলার ১৭; মহারাজ ২/২৫, রাবাদা ২/৩২)।
ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুইন্টন ডি কক।