সুন্দরবনে কাঠ চুরি করে ধরা খেয়ে নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করলেন বন কর্মকর্তা
রঘুনাথ খাঁঃ ট্যাংরাখালি টহলফাঁড়িতে রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে চুক্তিবদ্ধ চার শ্রমিকের মজুরীর টাকা যোগাড় করতে সুন্দরবনের মাথাভাঙা এলাকা থেকে চারশত গেওয়া গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকতার বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুর আড়াইটার বনবিভাগের দু’টি নৌকাযোগে এসব গাছ নিয়ে পাঁচ ব্যক্তি মাথাভাঙা নদী হয়ে জনবসতি সংলগ্ন মাদার নদীতে পৌঁছাতেই স্থানীয়দের নজরে আসে বিষয়টি।এসময় রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইঞ্চিনচালিত নৌকা নিয়ে কয়েক গ্রামবাসী পিছু নেয় সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ গাছের গুড়ি পরিবহনে জড়িত দুই নৌকার। ধাওয়া করে প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর গোলাখালীর বাঁকে পৌছে আটক করা হয় তাদের। একপর্যায়ে গ্রামবাসীকে ভিডিও করতে দেখে তড়িঘড়ি কাঠ বোঝাই সে নৌকায় বনবিভাগের পতাকা উঠিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে পাশ্ববর্তী টেংরাখালী টহলফাঁড়ির রান্নার কাজে ব্যবহারসহ নৌকায় অবস্থানকারী চার শ্রমিকের মজুরী দিতে এত অধিক সংখ্যক গাছ সাবাড় করা হয়। তবে গ্রামবাসীর হাতে আটকের পর শুরুতে তারা টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। তবে বিষয়টি জানাজানি হলে একই ঘটনায় সুন্দরবন থেকে কর্তৃনকৃত কাঠ উদ্ধার দেখিয়ে দু’দিন পর টেংরাখালী টহলফাঁড়ির ওসি বেলাল হোসেন বাদি হয়ে মামলা করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উৎপল মন্ডল ও আকতার হোসেনসহ অন্যরা জানায় গাছেরগুড়িসহ নৌকা আটকের পর বনকর্মী রফিকুল দাবি করেন জেলেদের মাধ্যমে গোপন সংবাদ পেয়ে তারা বনের গভীর থেকে কাটা অবস্থায় গাছগুলো উদ্ধার করেছেন। তবে গাছগুলো সদ্য কাটা দেখিয়ে শ্রমিকদের একজনের চোখে গাছের আঠা লাগার কারণ জানতে চাইলে তাদেরকে টেংরাখালী টহলফাঁড়ির ওসির সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এসময় টেংরাখালী টহলফাঁড়ির ওসি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং ‘দেখছি’ বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।উৎপল মন্ডলের দাবি টাকার বিনিময়ে তাদের ‘ম্যানেজে’ ব্যর্থ হয়ে দুই দিন পরে বনবিভাগের পক্ষ থেকে গাছ উদ্ধার দেখিয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার অভিযোগ খোদ বনবিভাগ এসব গাছ কেটেছে। স্থানীয়দের কাছে হাতেনাতে আটকের পর ‘ম্যানেজে’ ব্যর্থ হয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের চোখে ধুলো দিতে স্বয়ং চোরেরা মামলার বাদি সেজেছেন। তিনি এ ঘটনার তদন্ত দাবি করে বনবিভাগের অসাধু কর্মীদের চিহ্নিত করার আবেদন জানান।
আকতার হোসেন জানান, জ্বালানীর অজুহাতে একইভাবে সুন্দরবন থেকে খোদ বনকর্মীরা হাজার হাজার গাছ কাটছে। ধরা পড়লে সেটাকে উদ্ধার দেখিয়ে তারা দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে। মাথাভাঙা এলাকা থেকে গাছ কাটার পর উল্টো মামলার বাদি সেজে গোটা অপরাধকে ধামাচাপা দিচ্ছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে টেংরাখালী টহলফাঁড়ির ওসি বেলাল হোসেন জানান, জেলেদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গাছগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে গাছ অনেক হওয়ার কারণে বনবিভাগের একজন কর্মীর সাথে কয়েকজন বহিরাগতকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি কোন সিপিজি সদস্যের মাধ্যমে টাকা দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করেন। তবে ১ জুন থেকে সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা কিভাবে বনে ঢুকেছিল জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
এবিষয়ে কৈখালী স্টেশন অফিসার টিপু মন্ডল জানান, তাদেরকে গাছ উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছিল। লোক পাওয়া না যাওয়ায় অজ্ঞাতদের সে মামলায় আসামী করা হয়েছে। তদন্ত টিমের বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রাখেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।